নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের ইতিহাসে প্রথম বিদেশি অপারেটরের অধীনে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) ভিড়েছে মায়ের্সক লাইনের বাণিজ্যিক জাহাজ দাভাও। গতকাল বিকাল ৩টায় রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) পরিচালিত পিসিটিতে জাহাজটি ভিড়ে। এর মধ্য দিয়ে পিসিটির অপারেশন কার্যক্রম শুরু হলো।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলসহ বন্দর, আরএসজিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) আওতায় সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে জিটুজি ভিত্তিতে চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে তারা কিছু যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেছে। এছাড়া বন্ডেড ওয়্যারহাউজের লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কিছু ছাড়পত্র সংগ্রহ করেছে। এখন কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ শুরু হলো। তবে পুরোপুরি যন্ত্রপাতি সংগ্রহে তাদের আরও সময় লাগবে। এখন জাহাজের ক্রেন দিয়ে কনটেইনার নামানো ও ওঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ল্যান্ডলর্ড’
মডেলের মাধ্যমে পরিচালনার যুগে প্রবেশ করেছে। এত দিন পরিচালনা হয়ে আসছে ‘টুলপোর্ট’ মডেলে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পিপিসি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জাহাজটি পিসিটি থেকে রপ্তানি পণ্যবোঝাই ও খালি কনটেইনার নিয়ে ইন্দোনেশিয়া যাবে। এর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগে চট্টগ্রাম বন্দরের চতুর্থ টার্মিনাল পতেঙ্গা টার্মিনাল সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে। এ টার্মিনাল সব যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে পুরোপুরি চালু হতে আরও এক বছরের চেয়েও বেশি সময় লাগবে। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এনবিআর আটটি শর্তে সাময়িক টার্মিনাল পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। প্রথমে জাহাজের ক্রেন দিয়ে কনটেইনার ওঠানামা কার্যক্রম শুরু হয়।
জানা যায়, রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে (আরএসজিটিআই) বন্দরের মূল জেটির ভাটিতে বোটক্লাবের পাশে অবস্থিত টার্মিনাল পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। টার্মিনালটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠানটি এ টার্মিনালে যন্ত্রপাতি খাতে বিনিয়োগ করে পরিচালনা করবে। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করবে টার্মিনাল অপারেটর। চুক্তির পর সৌদি প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত টার্মিনালটিতে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কিছু যন্ত্র সংযোজন করা হয়েছে। তবে মূল যন্ত্রপাতি অর্থাৎ জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হতে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময় লাগবে। মূল যন্ত্র সংগ্রহের আগে জাহাজের ক্রেন দিয়ে কনটেইনার নামানো ও ওঠানো হবে। এছাড়া গত ১৭ এপ্রিল পতেঙ্গা টার্মিনালের ৩২ একর জায়গা বন্ডেড এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অর্থাৎ এই এলাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে পণ্য সংরক্ষণাগার ও পণ্যের নিরাপত্তা বিধান করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ, সারাদেশে আমদানি-রপ্তানি ও খালি কনটেইনারের ৯৮ শতাংশই পুরোনো জিসিবি, সিসিটি ও এনসিটিÑএই তিন টার্মিনালে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হতো। এত দিন পণ্য আমদানি ও রপ্তানির মূল ভরসা ছিল। এখন থেকে নতুন এ টার্মিনাল চালু হলে ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে আরও কম সময় লাগবে।