নিজস্ব প্রতিবেদক: এক বছরের ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে কমেছে বাংলাদেশিদের রাখা টাকার পরিমাণ। ২০১৬ সালের তুলনায় গত বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত কমেছে এক হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। গতকাল সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৭’ শীর্ষক ওই বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশের হিসেবে যা প্রায় চার হাজার ৬৯ কোটি টাকা। আর ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশ থেকে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় চার হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, ‘আমরাও হিসাব করে দেখেছি, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ব্যক্তিগত ডিপোজিট দিন দিন কমে আসছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে শুধু অর্থ নিয়ে সে দেশের ব্যাংকে জমা রাখা হয়, তা নয়। সারা বিশ্বে যে স্কিল ম্যানপাওয়ার রয়েছে, তারাও কিন্তু সেসব দেশের ব্যাংকগুলোয় স্বাভাবিকভাবে ডিপোজিট রাখতে পারেন। দেশের বাইরে বৈধভাবে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, এমনকি বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের পাশাপাশি সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও সেখানে অর্থ জমা করছেন।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, কেবল বাংলাদেশেরই নয়, সামগ্রিকভাবেই ২০১৭ সালে আমানত কমেছে সুইস ব্যাংকগুলোতে। দেশটিতে ব্যাংকের সংখ্যাও কমে গেছে। ২০১২ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ কোটি ৮০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। আবার ২০০৯ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৯০ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা এক হাজার ২৮১ কোটি টাকা। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল এ সময়ের মধ্যে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের জমা রাখা অর্থের পরিমাণও তিনগুণ বেড়ে গেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনীদের অর্থ গোপনে গচ্ছিত রাখার জন্য বিখ্যাত সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো। গ্রাহকের নাম-পরিচয় গোপন রাখতেও কঠোর দেশটির ব্যাংক খাত, যে কারণে অবৈধ আয় ও কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা রাখার নিরাপদ স্থান সুইস ব্যাংকগুলো। সুনির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য না দিলেও কয়েক বছর ধরে দেশভিত্তিক আমানতের পরিমাণ প্রকাশ করে আসছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।