Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:21 pm

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত কমেছে ৯৪%

শেয়ার বিজ ডেস্ক: দেশ থেকে অর্থ পাচার বাড়ছে। গত কয়েক বছরে এ প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে একটি অংশ জমা হতো সুইস ব্যাংকে। কয়েক বছর ধরেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে। তবে ২০২২ সালে হঠাৎ করেই তা রেকর্ড প্রায় ৯৪ শতাংশ কমে গেছে।

গতকাল (২২ জুন) দেশটির বার্ষিক ব্যাংকিং তথ্য প্রকাশের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের আমানতের পরিমাণ জানিয়েছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার ভয়ে দেশটি থেকে অনেকেই আমানত তুলে নিয়েছেন। তবে এ অর্থ দেশে না এসে দুবাই বা অন্যত্র পাচার হয়েও যেতে পারে।

২০২২ সালে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার পরিমাণে কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫.২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ বা প্রায় ৫৪০ কোটি টাকা, ২০০৪ সালের পর যা সর্বনি¤œ। ওই বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ৪১ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। আর ২০২১ সালে দেশটিতে সর্বোচ্চ আমানত জমা হয়েছিল। ওই বছর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় মোট আমানত জমা হয়েছিল ৮৭১.১ মিলিয়ন ফ্রাঁ। অর্থাৎ এক বছরে সুইস ব্যাংকে আমানত জমার পরিমাণ কমেছে ৮১৫.৯ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ বা ৯৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

তথ্যমতে, ব্যক্তি ও অন্যান্য ব্যাংকের আমানতÑএ দুই মিলিয়ে মোট আমানতের হিসাব করা হয় সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয়। গত বছর সুইস ব্যাংকে মোট আমানত কমলেও ব্যক্তি পর্যায়ের আমানতের পরিমাণ ৩৫.৩ শতাংশ বেড়ে ৩৫.৪ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ বা ৩৪৮.৪ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৬.৩ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। তবে সুইস ব্যাংকে মোট আমানত কমার কারণ হলো, বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোয় রাখা আমানতে ৯৭.৭ শতাংশ পতন।

মোট আমানতের হিসাবে, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সুইস ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি জমা রয়েছে ভারতীয়দের অর্থ। তবে সেটাও ১১.২ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৪০০ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ হয়েছে। সুইস ব্যাংকে মোট আমানতের হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে এক বছরে আমানত পতনের সর্বোচ্চ রেকর্ডও বাংলাদেশের। এরপর আফগানিস্তানের ৭৭.৫ শতাংশ এবং পাকিস্তানের ৪৫ শতাংশ কমেছে বার্ষিক আমানত।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সুইস ব্যাংকে নেপাল থেকে আমানতের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ২০২২ সালে যা ৬২ শতাংশ বেড়ে ৪৮২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে উন্নীত হয়েছে।

তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুইস ব্যাংকে আমানত রাখার প্রবণতা বেড়েছে। ১৯৯৬ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় আমানতের পরিমাণ ছিল ৩৮.৩ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। ২০০০ সালে তা বেড়ে হয় ৫১.৯ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ ও ২০০৫ সালে ৯৭.৩ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। ২০০৬ সালে তা প্রথম ১০০ মিলিয়নের ঘর অতিক্রম করে। ওই বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়ায় ১২৪.৩ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ ও ২০০৭ সালে ২৪৩.১ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ।

২০০৮ সালে সুইস ব্যাংকে আমানত কমে ১০৭ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ দাঁড়ালেও ২০০৯ সালেই তা ১৪৯.২ মিলিয়নে উন্নীত হয়। ২০১০ সালে তা আরও বেড়ে হয় ২৩৫.২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। ২০১৪ সালে তা ৫০০ মিলিয়ন ছাড়ায়। ২০১৫ সালে তা আরও বেড়ে হয় ৫৫০.২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। এরপর ওঠানামা করলেও ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে আমানত দাঁড়ায় ৫৬২.৯ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। তবে ২০২১ সালে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।