সোহেল রানা সবুজ: মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার আওতাধীন ধল্লা ইউনিয়নের বিনাডাঙি এলাকার বাসিন্দা মোঃ একলাছ ও রোকেয়া বেগম দম্পতি। জীবনের নানা বাঁকে বাস্তবতার কঠিন অঙ্ক কষে মিলিয়েছেন তার সমীকরণ। পেয়েছেন সুখপাখির দেখা। সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়ে আনন্দমুখর হয়ে উঠছে এক-একটি দিন।
স্মৃতি হাতড়ে রোকেয়া বেগমের আত্মকথন, দারিদ্রতা নামক হতাশার অন্ধকারের মাঝে স্বচ্ছলতার আলো দেখিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক। নারী বলে পিছিয়ে থাকা নয়, আত্মনির্ভরশীলতাই হতে পারে দিনবদলের মূলমন্ত্র। আর এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পথের সন্ধান। রোকেয়া বেগম আরোও বলেন, ‘‘বিয়ের সময় আমার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না। সংসারে অভাব ছিলো নিত্যসঙ্গী। এই রকম একটা অবস্থায় আমি আমার প্রতিবেশির কাছে জানতে পারি গ্রামীণ ব্যাংকের কথা। আজ থেকে ২৩ বছর আগে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হয়ে প্রথমে ৩০০০ টাকা নেই। সেই টাকা দিয়ে হাঁস-মুরগী পালন শুরু করি। এরপর টাকা তুলে কৃষিকাজ করি। এ কাজে উন্নতি করে গরু আর গাভী কিনি। আমার খামারে গত বছর ১৭-১৮টি গাভী ছিলো। বিক্রি করে বর্তমানে রয়েছে ৭টি গাভী। প্রতিদিন প্রায় ৪০ লিটার দুধ হয়। এটি বিক্রি করে সংসার ভালোই চলে।’’
মানিকগঞ্জ জেলায় গ্রামীণ ব্যাংকের সিংগাইর ধল্লা শাখার ৫০/ম কেন্দ্রের ঋণগ্রহীতা রোকেয়া বেগম, ২০০০ সালে সদস্য হয়ে কোনো রকম জামানত ছাড়াই পর্যায়ক্রমে সহজ ঋণ, বিশেষ বিনিয়োগ ঋণ, গৃহ ঋণসহ বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজনানুসারে ঋণ গ্রহণ করেন। খামারে গরুর পরিচর্যায় ব্যস্ত ।
রোকেয়া বেগম আরোও বলেন,‘‘ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গৃহঋণ নিয়ে এই বাড়ি করেছি। এখন আমার থাকার ভালো একটি জায়গা হয়েছে। দুই সন্তানকে শিক্ষিত করেছি। এক ছেলে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছে। সে এখন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। আমার ব্যবসার পুঁজি ৪০ লাখ টাকা। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় কখনো দেরি হলেও সমস্যা হয় নাই। আমাকে গ্রামীণ ব্যাংকের স্যারেরা সব সময়ই আয় উন্নতির জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে। ভবিষ্যতে ঋণ নিয়ে খামারটাকে আরোও বড় করার ইচ্ছা আছে।’’
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেবলই ঋণ সহায়তা নয়, সঠিক কাজে যেনো এই ঋণের টাকা ব্যয় করা হয় তা নিশ্চিতকরণে গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণের মধ্যে ছিলেন রোকেয়া বেগম। ফলস্বরূপ, আর্থিক দুরাবস্থা কাটিয়ে স্বচ্ছলতার পানে এগিয়ে যান এই ঋণগ্রহীতা। বলছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সিংগাইর ধল্লা শাখার এরিয়া ম্যানেজার মোঃ মনিরুজ্জামান।
তিনি আরোও জানান,‘‘ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ঋণ নেন রোকেয়া বেগম। গৃহঋণ হিসেবে নিয়ে ২০ লাখ টাকার মতো খরচ করে বাড়ি করেন। সর্বশেষ তিনি ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা বিশেষ বিনিয়োগ ও সহজ ঋণ নিয়েছেন। রোকেয়া বেগম নিজে সাবলম্বী হয়েছেন, তার পরিবারেও এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। শুধু রোকেয়া বেগম-ই নয়, আমাদের এই এরিয়ায় ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ৯৩% নারী আজ অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল।’’
অর্থনৈতিক মুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন বিষয়াবলিতে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার ছাপ পড়েছে মানিকগঞ্জ জেলায়। এখানকার অনেক নারীই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ সহায়তা গ্রহণ করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার, কাজে লাগিয়ে বেরিয়ে এসেছেন দারিদ্রতার অন্ধকার থেকে। একদিকে যেমন নিজেরা স্বনির্ভর হচ্ছেন, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছেন অনেকেরই। উন্নয়নের এ যাত্রায় তাদের কাছে গ্রামীণ ব্যাংকের অবদান কখনোই ভুলবার নয়।