শেয়ার বিজ ডেস্ক : ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) সুদহার ছয় দশমিক ২৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে সুদহার কামানোর দিকে যায়নি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খবর ইকোনমিক টাইমস, পিটিআই। তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র সুদহার বাড়াতে পারে এ আশঙ্কায় অনিশ্চিত বিশ্বঅর্থনীতি। পাশাপাশি ভারতেও সুদহার কমলে নগদ অর্থের জোগান বাড়বে, যার পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে এ আশঙ্কা থেকে সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
আরবিআই’র গভর্নর উর্জিত প্যাটেলের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মুদ্রানীতিবিষয়ক কমিটি একমত হয়েই গত বুধবার সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। আরবিআই’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন মুদ্রানীতিতে সুদহার ছয় দশমিক ২৫ শতাংশে রাখার পাশাপাশি নগদ জমার অনুপাত চার শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অপরদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সাত দশমিক ছয় শতাংশ থেকে কমিয়ে সাত দশমিক এক শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ শতাংশ, তবে তা ছাড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২ ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী বেড়ে ৩৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। আরবিআই জানিয়েছে, পরবর্তী মুদ্রানীতি আগামী বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হবে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপকে সঠিক বলে উল্লেখ করেছে। সুদহার অপরিবর্তিত রাখার ব্যাপারে আরবিআই’র সিদ্ধান্তকে সাহসী পদক্ষেপও বলছে মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সুদহার কমলে বিদেশি সংস্থাগুলোর বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়তো। আগামী সপ্তাহেই মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার বাড়াবে এমন সম্ভাবনা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। সে কারণেই আরবিআই’র এমন সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরাও।
ফেডের প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতির ওপর কতটা পড়ে, তা খতিয়ে দেখে পরেরবার আরবিআই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলেই মনে করছেন তারা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সুদহার না কমানোকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। কারণ সুদহার কমলে বাড়তি নগদ অর্থের চাপে মূল্যস্ফীতি আরও বেশি করে বাড়তো বলেই তাদের আশঙ্কা।
তবে শিল্পঋণে ও ব্যক্তি পর্যায়ে গাড়ি-বাড়ি ঋণে সুদহার কমলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাঙ্গা করায় সহযোগিতা করতো বলে মনে করছেন কেউ কেউ। শেয়ারবাজারেও সুদহার অপরিবর্তিত রাখার প্রভাব তেমন পড়েনি। তবে বিনিয়োগকারীদের একাংশ কিছুটা হতাশ হয়েই শেয়ার বেচতে শুরু করলে বাজার দ্রুত পড়তে শুরু করে। গত বুধবার লেনদেন শেষে সেনসেক্স ১৫৫ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ২৬ হাজার ২৩৬ দশমিক ৮৭তে। নিফটি ৪১ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে হয় আট হাজার ১০২ দশমিক ০৫।
ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউবিআই’র প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, বর্তমানে নোট বাতিলের কারণে এমনিতেই ব্যাংকগুলোতে মোটা অঙ্কের অর্থ জমা পড়েছে। তা সংগ্রহের খরচও কম। এছাড়া ব্যাংকে জমা পড়া যে অর্থ রিজার্ভ ব্যাংক নিজের কাছে নিয়ে নিয়েছিল, তা খুব শিগগিরই ব্যাংকগুলোকে ফেরত দেবে। সে ক্ষেত্রে নগদ অর্থের জোগান আরও দ্রুত বাড়বে। এ অবস্থায় ঋণ বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো নিজেরাই সুদহার কমানোর রাস্তায় হাঁটতে শুরু করবে বলে আমার ধারণা। তার ওপর রিজার্ভ ব্যাংক সুদহার কমালে সমস্যা সৃষ্টি হতো। মতিলাল অসওয়াল ফিন্যানসিয়াল সার্ভিসেসের সিএমডি মতিলাল অসওয়াল বলেন, ফেডের সিদ্ধান্তের পর বিশ্বঅর্থনীতি কোন পথে হাঁটে, তা দেখে নিতে চায় আরবিআই। ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ এবং ওম ক্যাপিটালের চেয়ারম্যান বিকে দত্ত বলেন, যখন নগদ অর্থের জোগান বাড়ে, তখন মূল্যস্ফীতির প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়াটাই স্বাভাবিক। অর্থনীতির নিয়ম মেনে এই অবস্থায় বরং সুদহার বাড়ানোর রাস্তায় হাঁটাটাই রিজার্ভ ব্যাংকের পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ভারতে এখন চাহিদা কম, ফলে সেটা সম্ভব ছিল না। অন্তত সুদহার না কমিয়ে রিজার্ভ ব্যাংক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ফিকি অবশ্য সুদহার না কমায় অখুশি। সংগঠন সভাপতি হর্ষ বর্ধন নেওটিয়া মনে করেন, চাহিদা বাড়ানোর জন্য সুদহার অন্তত ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানো উচিত ছিল।
Add Comment