সুদের হার আবারও বাড়াল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড। গত দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় বাড়াল সুদের হার। এবারের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খবর: বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যবৃদ্ধির হার লাফিয়ে বেড়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে গত বুধবার সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত মার্চ ও মে মাস মিলিয়ে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বাড়ল সুদের হার। প্রসঙ্গত গত বুধবার সুদের হার বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। তিন বছর পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরবিআই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে নাগরিকদের ধৈর্য ধরার আরজি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন। সে সঙ্গে জানানো হয়েছে, আগামী জুন ও জুলাইয়ে সুদের হার আরও বাড়তে পারে। আর্থিক নীতিসংক্রান্ত পরবর্তী বৈঠকেই এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তবে এই বৃদ্ধির হার আকাশছোঁয়া হবে না বলেও আশ্বস্ত

করা হয়েছে।

কভিডকালে বিশ্বের সব দেশের অর্থনীতিকে সংকটে পড়তে হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাফিয়ে বেড়েছে। সেই আঘাত সামলে উঠতে না উঠতেই গত ২৪ ফেব্রæয়ারি থেকে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। আর এরই প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। গত মার্চে মূল্যবৃদ্ধি পৌঁছায় আট দশমিক পাঁচ শতাংশে, যা গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে দাবি।

বুধবারই ভারতে ৪ বছর পর রেপো রেট অর্থাৎ ব্যাংকগুলোকে দেয়া সুদের হার বাড়িয়েছে দেশটির রিজার্ভ ব্যাংক। এক ধাক্কায় রেপো রেট বাড়িয়ে দেয়া হয় ৪০ বেসিস পয়েন্ট। ফলে রিজার্ভ ব্যাংকের নতুন রেপো রেট দাঁড়াচ্ছে চার দশমিক ৪০ শতাংশ। আরবিআই গভর্নর এদিন মেনে নিয়েছেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে রেপো রেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গতকাল ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও (ব্যাংক অব ইংল্যান্ড) সুদের হার বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত চারবার সুদের হার বাড়ানো হবে।

রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়াও (আরবিএ) সুদের হার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম সুদের হার বাড়াবে।

ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ালে যুক্তরাষ্ট্রে নানা পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। এমনিতে কভিড-১৯ মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। যুদ্ধ শুরু হলে দেশটির মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এ সময় তেলের চাহিদা যখন বাড়ছে, তখন ইউক্রেন নিয়ে সংঘাত নতুন করে তেলের বাজারকে অস্থিতিশীল করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে গত ফেব্রুয়ারিতে ব্যারেল প্রতি ক্রড অয়েলের দাম উঠে ৯৬ ডলারে, যা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। তখন দাম আরও বাড়বে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, ১৯৮১ সালের অক্টোবরের পর দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কখনো ১০ শতাংশের বেশি হয়নি। জেপি মরগান জানায়, রাশিয়ার তেল সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ হলে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১২০ ডলারে পৌঁছাবে। এ কারণে পেট্রলের দাম আরও ব্যয়বহুল হতে পারে। এতে ভোক্তাদের আস্থায় ধাক্কা ও করপোরেট বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। তাই সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ফেডারেল রিজার্ভের এ সিদ্ধান্তের পেছনে কয়েকটি প্রধান লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চায় দেশটির সরকার। দাম স্থিতিশীল রাখতে চায় এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০