শোবিজ ডেস্ক: সংগীতজ্ঞ, স্বরলিপিকার ও নজরুল গবেষক সুধীন দাশ আর নেই। রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
সুধীন দাশ গান গাওয়ার পাশাপাশি সুর করেছেন, সংগীত পরিচালনা করেছেন, সংগীত নিয়ে করেছেন গবেষণাও। কাজী নজরুল ইসলামের অনেক গানের স্বরলিপি তৈরি করেছেন তিনি। একুশে পদক পাওয়া এই শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শোক জানিয়েছেন।
সংগীতশিল্পী সুজিত মোস্তফা বলেন, সুধীন দাশ দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। হƒদরোগ ও ডায়াবেটিসের সমস্যাও ছিল তার। গত মঙ্গলবার সকালে তাকে এ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখেন। সুধীন দাশের মেয়ে মিতু দাশ ও জামাতা হাসান মাহমুদ স্বপন জানান, গত সোমবার রাতে তার বেশ জ্বর আসে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ খাওয়ানো হয়। রাতে জ্বর কমেনি, মঙ্গলবার সকালে অবস্থার আরও অবনতি হয়। এক পর্যায়ে কথা বলাই বন্ধ হয়ে যায়।
স্বপন বলেন, ‘এরপর বাবাকে প্রথমে কল্যাণপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিলে ডাক্তাররা জানান, আইসিইউ খালি নেই। পরে এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তার বডি ফাংশন একের পর এক অকার্যকর হতে শুরু করে। পরে রাত ৮টা ২০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ তিনি জানান, সুধীন দাশের মরদেহ এ্যাপোলোর হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে এখান থেকে তার মরদেহ নেওয়া হবে ধানমন্ডির নজরুল ইনস্টিটিউটে, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন নজরুলসংগীতের শুদ্ধ স্বরলিপি প্রণয়নের কাজ করেছেন।
নজরুল ইনস্টিটিউটের পর সুধীন দাশের কফিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আনা হবে বলে পরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান। এরপর পোস্তগোলা শ্মশানে তাকে দাহ করা হবে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
সুধীন দাশের জš§ ১৯৩০ সালের ৩০ এপ্রিল কুমিল্লা শহরের তালপুকুরের বাগিচাগাঁওয়ে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বিএ পড়াকালীন সময় তিনি পুরোপুরি ঝুঁকে পড়েন সংগীতে। পরে ১৯৪৮ সালে বেতারে নিয়মিতভাবে নজরুলসংগীত গাইতে শুরু করেন সুধীন দাশ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তিনি মনোনিবেশ করেন নজরুলসংগীতের শুদ্ধ স্বরলিপি প্রণয়নে। আদি গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে সেই স্বরলিপি উদ্ধারের কাজে তাকে সহায়তা করেন স্ত্রী নীলিমা দাশ। ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে ২৫টি স্বরলিপি নিয়ে নজরুল স্বরলিপির প্রথম খণ্ডটি প্রকাশ করে নজরুল একাডেমি। পরে নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে বের হয় আরও ৩৩টি খণ্ড।
তার একমাত্র ছেলে গিটারিস্ট নিলয় দাশ ২০০৬ সালে হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
সুধীন দাশের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে এক বার্তায় খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘নজরুলসংগীত সাধনার জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন গুণী সংগীত সাধককে হারালো; তার শূন্যস্থান সহজে পূরণ হওয়ার নয়।’
Add Comment