সুনামগঞ্জে তিন হাসপাতালে পানি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সুনামগঞ্জের তিনটি হাসপাতালে পানি ঢুকে গেছে। এর ফলে সেখানে সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। জেলা শহরের সুনামগঞ্জ বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ছাতক উপজেলার কৈতক ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও তাহেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। কোথাও চিকিৎসকদের আবাসিক কোয়ার্টারও প্লাবিত হয়ে গেছে। এতে রোগী ও চিকিৎসক উভয়েই ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। খবর: বিডি নিউজ।

সুনামগঞ্জে কয়েক দিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও অঝোর ধারায়, আবার কখনও গুঁড়িগুঁড়ি। এরই মধ্যে ঝড়-বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। ১০ দিন ধরেই এই অবস্থা চলছে জেলাজুড়ে। হাওর অধ্যুষিত এ জেলার সড়ক ও সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কয়েক জায়গায়। পানি উঠে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও। পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয় দিতে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বরাদ্দ করা হয়েছে শুকনো খাবার ও চাল।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপরে আছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমার পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে তিন সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, সুরমা, কুশিয়ারাসহ এই অঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি আরও কিছু বাড়তে পারে। বৃষ্টিপাত ও ঢল অব্যাহত থাকলে পানি আরও বাড়বে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটার আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষজন।

সুনামগঞ্জের ডিসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলাসহ কয়েকটি স্থানে ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ছাতকে ১০০টি পরিবার এবং দোয়ারাবাজারে ৩০টি পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার এবং সাড়ে ১৪ কেজির শুকনো খাবারের প্যাকেট দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বানভাসীদের মধ্যে বিতরণের জন্য ১৪০ মেট্রিক টন জিআরের চাল, ১২ লাখ টাকা ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করা হয়েছে।’

শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ শহরের কালিপুর, ওয়েজখালি, হাজিপাড়া, তেঘরিয়া, নবীনগর, পূর্ব নতুনপাড়া, হাসননগরসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। শহরের বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। যারা দরিদ্র এবং নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে অবস্থান করেন তারা উঁচু এলাকায় এসে আশ্রয় নিচ্ছেন। এই এলাকাগুলোর সড়ক প্লাবিত হওয়ায় চলাচলও বিঘিœত হচ্ছে।

জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন আব্দুল্লাহ আল বিরুনি খান জানান, জেলার তিনটি হাসপাতালে পানি উঠেছে। এর মধ্যে দুটি হাসপাতালের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। আর তাহেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কম্পাউন্ডে পানি ঢুকেছে। হাসপাতালের ভেতরে এখনও যায়নি। বৃষ্টি আরও হলে বন্যার পানি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়বে। সেখানে রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ায় রোগীরা আসতে পারছে না। মানুষের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।

এই অবস্থার মধ্যে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি সিভিল সার্জন। তিনি আরও বলেন, উপজেলাগুলোয় পর্যাপ্ত ওরস্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে।

সুনামগঞ্জ বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা অতনু ভট্টাচার্য দুপুরে বলেন, ‘তিন দিন ধরে হাসপাতালের নিচতলায় পানি উঠেছে। আগে নিচতলায় জরুরি বিভাগ ছিল। এখন সেটি দোতলায় নিয়ে আসা হয়েছে। রোগীদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় রোগীদের আসতেও কষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখানে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। আরও পানি বাড়লে সমস্যা হবে খুব।’

কৈতক ২০ শয্যার হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাইদুর রহমান বলেন, ‘এখান আবাসিক কোয়ার্টারে পানি ঢুকে গেছে। ফলে সেখানকার চিকিৎসকদের পরিবার বিপদে পড়েছে। হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ায় আউটডোরের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ফলে জরুরি চিকিৎসা ছাড়া কেউ আসছেন না। অন্য রোগীদের দোতলায় রাখা হয়েছে। সেবা তো ব্যাহত হচ্ছেই।’

সদরের চালবন্দ গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘আমার ১৫০ শতক জমির ধান সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। পাকা ধান ডুবে যাওয়ায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছি। এখন পানি কমার আর সুযোগ নেই। তাই এই ফসল সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০