Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 4:29 pm

সুনামগঞ্জে বন্যায় ভেসে উঠছে সড়কের ক্ষত

প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ: সাম্প্রতিক বন্যায় সুনামগঞ্জের সড়কপথের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ও এলজিইডি মিলে জেলায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার গ্রামীণ আঞ্চলিক সড়কের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে সড়কের ক্ষতচিহ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে চরম দুর্ভোগ নিয়ে যাতায়াত করছেন এলাকাবাসী।

এদিকে বন্যার পানি নামার পর সড়কপথে যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সাময়িকভাবে সংস্কার করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত এখনো বয়েই বেড়াচ্ছে জেলার ১২ উপজেলার যোগাযোগ সড়কসহ গ্রামীণ সড়কগুলো। এর মধ্যেই এবার দুদফা বন্যার চাপ গেছে সবক’টি সড়কের ওপর। তাতে এই জেলার প্রায় ২৭ লাখ মানুষ চরম যোগাযোগ দুর্ভোগে পড়েছেন।

গ্রামীণ জনপদের অনেক এলাকাতেই এখন না চলছে সড়কযান, না নৌযান। পায়ে হেঁটে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। অসুস্থ, বয়স্ক ও শিশুদের যাতায়াত ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

দুই বছর আগে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বড় সড়কগুলোর মধ্যে দোয়ারাবাজার-বাউর কাঁপন, কালীপুর-পাগলা-জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ-জয়নগর, জামালগঞ্জ-সেলিমগঞ্জ, দোয়ারাবাজার-বাংলাবাজার, পাথারিয়া-বাংলাবাজার, দিরাই-কলকলিয়া, বিশ্বম্ভরপুর -আনোয়ারপুর, সুনামগঞ্জ-বেতগঞ্জ সড়কে এখনো কাজ করতে পারেনি এলজিইডি। একইভাবে গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক-দোয়ারাবাজার, নিয়ামত-তাহিরপুর, মদনপুর-দিরাই ও শাল্লা এবং পাগলা জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ আউশকান্দি সড়কসহ জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক থেকে দুই বছর আগের বন্যার ক্ষত সারাতে পারেনি সড়ক বিভাগও। এর মধ্যেই এবারও দুদফা বন্যায় এসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এলজিইডির প্রায় ৪০০ কোটি টাকার কাঁচা পাকা গ্রামীণ সড়ক এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২৪৯ কোটি টাকার সড়ক পাহাড়ি ঢলে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়েছে।

সুনামগঞ্জ-বেতগঞ্জ সড়কে সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যার পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি। বেতগঞ্জের বাসিন্দা ইউসুফ মিয়া বলেন, ২০২২ এর বন্যার ক্ষত এখনও রয়েছে সড়কজুড়ে। বয়স্ক মানুষ ও নারী নিয়ে এই পথে চলা দায়। এর মধ্যে এবারের বন্যায় আরও ভেঙেছে। এখন কীভাবে চলবে মানুষ?

সুনামগঞ্জ-বেতগঞ্জ সড়কের সিএনজি চালক সুলতান বলেন, এই সড়কের যে অবস্থা, দুদিন গাড়ি নিয়ে বের হলে একদিন গ্যারেজে রাখা লাগে। ওয়ার্কশপে মেরামত করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। চলতি অবস্থায় গাড়ি থেকে যন্ত্রাংশ খুলে যায়।

জাওয়া-ছাতক সড়কের সিএনজি চালক এরশাদ আলী বলেন, আমাদের চলাচলে খুব অসুবিধা হচ্ছে। আমরা যারা ভাড়ায় গাড়ি নিয়ে বের হই তারা বেশি অসুবিধার সম্মুখীন। রাস্তা ভাঙা, গর্ত তাছাড়া রাস্তার পাশ যে কোনো সময় ধসে যাবে।

শহরতলির ধারারগাঁও-নতুন ব্রাহ্মণগাঁও সড়কে ৯টি ভাঙন দেখা দেওয়া ছাড়াও পুরো সড়কের ওপরের ঢালাই ওয়াস আউট হয়েছে এবার। এই সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে চলার কোনো উপায় নেই। নৌকার পথও নেই। সড়কে চলাচলকারী লক্ষাধিক মানুষ বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরাও গ্রামীণ যোগাযোগ সড়ক নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

কোরবাননগর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুল কাইয়ুম বলেন, রঙ্গারচর, দোয়ারাবাজারের বাংলাবাজার ইউনিয়নের একাংশের মানুষসহ কোরবাননগর ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের লাখো মানুষের যোগাযোগ পথ এই সড়ক। ২০২২ সালের বন্যায় সড়কটির মাটিসহ ঢলের পানিতে ভেসে গিয়েছিল। দুমাস আগে কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামত করে চলাচল উপযোগী করা হয়। কিন্তু গেল ঈদের দিন সীমান্তের ওপার থেকে নামা পাহাড়ি ঢলের চাপ সুরমা নদী নিতে না পারায় এই সড়ক স্থানে স্থানে ভেঙে পানি ঢুকছে পাশের দেখার হাওরসহ ছোট ছোট হাওরে। ভেসে যাচ্ছে অনেক কাঁচা পাকা সড়ক। আমন চাষাবাদ নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, এবারের দুদফা বন্যায় সড়কের, বিশেষ করে গ্রামীণ সড়কের যে ক্ষতি হয়েছে মেরামত করতে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা লাগবে। এর আগের ২০২২-এর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কিছু সড়কের ইতোমধ্যে কাজ হয়েছে। বাকি যেগুলো এখনো হয়নি, সেগুলো মেরামত করতে আরও ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

একইভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপজেলা সড়কসহ আঞ্চলিক মহাসড়কেরও ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে এই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করার জন্য একটি প্রকল্পে ১৭ কোটি টাকার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি দুইভাবে রাস্তার সংস্কারের কাজ করছি। এবার যে ক্ষতি হয়েছে, সেই সড়ক চালু রাখার জন্য ১৯ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কাজ করার জন্য ২৪৯ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা লাগবে জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।