শেয়ার বিজ ডেস্ক: সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির দেখেছে মানুষ। গতকাল শুক্রবার সকালে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। এদিকে বন্যাকবলিত হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর প্রাথমিকভাবে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন সুনামগঞ্জ। খবর: ঢাকা পোস্ট।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১১টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরের সংখ্যা ৪৫ হাজার ২৮৮টি। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৭টি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার ৫৪১টি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো জেলার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও ত্রাণ তৎপরতা-সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করেছেন সুনামগঞ্জের ডিসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তবে বন্যা পুরোপুরি কমে গেলে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় জেলায় ২৫ হাজার ২০৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় ১ হাজার ৬৪২টি গবাদিপশু মারা গেছে। এর মধ্যে গরু ৪২২টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল ৬৬৯টি ও ভেড়া ৫১৪টি। এ ছাড়া বন্যায় ২৮ হাজার ৮০৫টি মুরগি ও ৯৭ হাজার ৮৩১টি হাঁস মারা গেছে। বন্যায় জেলায় এ পর্যন্ত ৩৮৪ কিলোমিটার সড়ক, ১৫৫টি সেতু-কালভার্টের সংযোগ সড়ক এবং ৪টি সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও বিভিন্ন স্থানে পানি আছে। তাই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এদিকে এলজিইডি ও সওজের দাবি অনুযায়ী, মোট ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সড়ক, সেতু, কালভার্ট ও অ্যাপ্রোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এলজিইডি সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম জানান, বন্যায় ৪৫৭১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, তাদের আওতাধীন ৮টি সড়কের ৩৫৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৮৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাদের দুজনেই জানান, পানি পুরোপুরি নামলে ক্ষতি আরও বাড়বে।
সুনামগঞ্জে এবারের ভয়াবহ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মানুষের ঘরবাড়ি ও সড়কের। এর আগে কোনো বন্যায় এত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়নি। এত সড়ক নষ্ট হয়নি। বন্যার পানি কমলেও বাড়িঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় এখনও বিপুলসংখ্যক মানুষ নিজের ভিটায় ফিরতে পারছে না। ঘরবাড়ি হারানো এতসংখ্যক মানুষ কীভাবে বাড়িতে উঠবে, সেটাই এখন উদ্বেগের বিষয়।
তবে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বন্যার পানি শহর থেকে কিছুটা কমলেও জেলার সার্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। হাওর এলাকার রাস্তাঘাট, হাটবাজার, বাড়িঘর এখনো বন্যার পানির নিচে। মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। বেশিরভাগ বাড়িঘর স্রোত আর ঢেউয়ে ভেঙে যাওয়ায় মানুষ বাড়িঘরে ফিরতে পারছে না। খেয়ে না-খেয়ে কোনোমতে দিন পার করছে সবাই।
তবে বেশি বিপাকে পড়েছে হাওর এলাকার মানুষ। বন্যার পানি বাড়িঘর থেকে না নামায় তারা এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বানভাসি মানুষ জানান, এত দীর্ঘ বন্যার কবলে কোনো দিন পড়েননি। বাড়িঘর হারিয়ে তারা আজ নিঃস্ব।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবারের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের বাড়িঘর, সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনও অনেক জায়গায় পানি থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে দেয়া যাচ্ছে না।
ডিসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই অর্থসহায়তা দেয়া হবে, যাতে তারা নগদ অর্থ দিয়ে বাড়িঘর মেরামত ও পুনর্বাসিত হতে পারেন।