Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:46 pm

সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া রোজা পরিত্যাগ করা সম্পূর্ণ নিষেধ

ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ রোজা। শুধু আত্মশুদ্ধিই নয়, এ মাস আত্মনিয়ন্ত্রণেরও। রোজার অন্যতম লক্ষ্য মানুষের স্বাস্থ্যগত উন্নতি। রোজা রাখলে অনেকে স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় করেন। রোজা কষ্টকর ইবাদত এবং রোজার দ্বারা শরীরে চাপ পড়ে বলে অনেকেই রোজা রাখেন না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শরিয়তের বিধান অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া রোজা পরিত্যাগ করা সম্পূর্ণ নিষেধ। সুস্থ ব্যক্তি তো বটেই, অনেক অসুস্থ ব্যক্তিকেও রোজা ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না। রমজান মাসে রোজা রাখা সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ‘যে ব্যক্তি রোজার মাসটি পাবে, তারই কর্তব্য হচ্ছে রোজা রাখা।’[সুরা বাকারা: ১৮৫]

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ ব্যাধিগ্রস্ত হলে বা সফরে থাকলে, অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদের অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদিয়া অর্থাৎ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে, এটা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন তথা রোজা রাখাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে।’ অতিশয় কষ্ট বলতে অতি বার্ধক্য, চিরস্থায়ী রোগ, যা অতীব কষ্টকর তার জন্য ওই মাসে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। পরে কাজা আদায় করলেই চলবে। রোজা রাখায় প্রাণের আশঙ্কা আছেÑএ কথাটি কোনো আলেম এবং ইসলামি জ্ঞানসম্পন্ন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হতে হবে। গর্ভবতী মহিলার যদি গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা হয় অথবা স্তন্যদায়ী মা যদি রোজা দ্বারা তার নিজের বা তার শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে সেও এই মাসে রোজা না রেখে পরে সুবিধামতো সময়ে কাজা আদায় করতে পারে। অনেক রোগীই যেকোনো অবস্থায় রোজা রাখতে বদ্ধপরিকর। আবার অনেকেই নিজের মতো অজুহাত তৈরি করে রোজা না রাখার যুক্তি খোঁজেন। আসলে দীর্ঘস্থায়ী রোগেও রোজা রাখা সম্ভব। রোজার মাসে পেপটিক আলসার রোগীরা খালি পেটে থাকবেন, ডায়াবেটিস রোগীরা কীভাবে রোজা রেখে ইনসুলিন নেবেন, উচ্চরক্ত চাপের রোগীরা কীভাবে দুবেলা বা তিন বেলা ওষুধ সেবন করবেন এসব চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েন। আবার কিছু কিছু অসুস্থ ব্যক্তি এমনকি সুস্থ ব্যক্তিরাও দুর্বলতা এবং নানা রকম দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনার কারণে রোজা রাখতে গড়িমসি করেন। আসলে রোজা রাখলে শরীরে তেমন কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ে না। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুচিন্তিত অভিমত হলো, রোজা স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি তো করেই না, বরং শরীর ও মনের উন্নতি লাভেও সহায়ক। পেপটিক আলসার, ডায়াবেটিক, হƒদরোগী, বাত ব্যথার রোগীরাও সরাসরি রোজায় উপকার পান। পেপটিক আলসারের কারণে অনেকেই রোজা ছেড়ে দেন। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, পেপটিক আলসারে রোজা বিশেষ উপকারী।

মানুষের পেট ঠিক থাকলে সব কিছু ঠিক থাকে। আর পেটে সমস্যা দেখা দিলে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। এক মাস সিয়াম পালন করলে উত্তম রূপে পেটের দূষিত ক্ষতিকর পদার্থের নিষ্কাশন ঘটে। পাকস্থলীতে এক ধরনের উপকারী জীবাণু খাদ্য হজমে সাহায্য করে। বছরে এক মাস রোজার ফলে এ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য জীবাণুগুলো বিশ্রাম পায়। বিশ্রামের ফলে এরা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে বাকি ১১ মাস আবার খাদ্য হজমে ভালোভাবে সাহায্য করতে পারে।

লিভারের অসুখে রোজা: লিভারের রোগ বিভিন্ন ধরনের তাই রোজার হুকুমও রোগী ভেদে ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। লিভারের রোগগুলোকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি এ দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস স্বল্পমেয়াদে জন্ডিস হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। ভাইরাল হেপাটাইটিসের রোগীর ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। একেবারেই খেতে অক্ষম হলে রক্তনালিতে স্যালাইন দেয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। সে হিসাবে ভাইরাল হেপাটাইটিসে রোজা রাখা উচিত নয়।

ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীর জন্য রোজা রাখার ব্যাপারে কোনো বাধা তো নেইই, বরং রোজা তার লিভারের ফ্যাট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যাদের পেপটিক আলসার ধরা পড়েছে, তাদের যদি রক্তবমি হওয়ার বা আলকাতরার মতো কালো পায়খানা হওয়ার ইতিহাস থাকে, তাদের উচিত হবে রমজান মাস আসার আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।

মুহাম্মদ আকিল নবী