সুনীল অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা

সামিহা খাতুন : ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি হচ্ছে সমুদ্রসম্পদ-নির্ভর অর্থনীতি। ১৯৯৪ সালে বেলজিয়ামের অধ্যাপক গুন্টার পাউলি ভবিষ্যতের অর্থনীতির রূপরেখা প্রণয়নের জন্য একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব মডেল হিসেবে সুনীল অর্থনীতির ধারণা দেন। মাছ ও মৎস্যসম্পদের মাধ্যমে খাবার চাহিদা মেটায় সমুদ্র। মানুষ ও পণ্য পরিবহনের একটি মাধ্যম সমুদ্র। এছাড়া সমুদ্র নানা ধরনের প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ, যেমন বালি, লবণ, কোবাল্ট, গ্রাভেল, কপার প্রভৃতির আধার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তেল ও গ্যাস আহরণ ক্ষেত্র হিসেবে সমুদ্রের প্রয়োজন হয়। এসব উপাদান সমষ্টিকেই বলা হয় সুনীল অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনমি।

বিশ্বব্যাপী সুনীল অর্থনীতির চিত্র লক্ষ করলে দেখা যায় বছরব্যাপী তিন থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে সমুদ্রকে ঘিরে। বিশ্বের ৪৩০ কোটি মানুষের ১৫ শতাংশ আমিষের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। পৃথিবীর ৩০ শতাংশ গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে সমুদ্রতলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে। এছাড়া সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জ্ঞান বৃদ্ধির মাধ্যমে সমুদ্রনির্ভর ওষুধশিল্পও গড়ে তোলা সম্ভব। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে প্রায় ৯০০ কোটি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খাবার জোগান দিতে বিশ্ববাসীর হতে হবে সমুদ্রের মুখাপেক্ষী।

সমগ্র বিশ্বে ক্রমেই সুনীল অর্থনীতি জনপ্রিয় হচ্ছে। বিগত বছরগুলোয় যত আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছে, তার সবগুলোতেই সুনীল অর্থনীতি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। অর্থনৈতিক সহায়তা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি), জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি), বিশ্বব্যাংক, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট-বড় দেশ সুনীল অর্থনীতিনির্ভর উন্নয়ন কৌশল প্রণয়ন করছে।

বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে সমুদ্রনির্ভর সুনীল অর্থনীতির বদৌলতে। ২০১২ ও ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় এবং এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের সমপরিমাণ টেরিটোরিয়াল সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব, অধিকার ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আয়তন প্রায় আরেকটি বাংলাদেশের সমান হওয়ায় এই সমুদ্রবিজয়ের পর খুলে গেছে নীল বিপ্লবের অপার দুয়ার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও ভিশন-২০৪১ অর্জনে সুনীল অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সমুদ্রে অবস্থিত বিশাল জলরাশি এবং এর তলদেশের বিশাল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়েছে ব্লু ইকোনমির মাধ্যমে। ধারণা করা হয়, বঙ্গোপসাগরের তলদেশে যে খনিজ সম্পদ রয়েছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো সাগর-উপসাগরে নেই।

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমুদ্রসম্পদের অবদান মাত্র ৯ দশমিক ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার অথবা ছয় শতাংশ। দেশের স্থলভাগের প্রায় সমপরিমাণ সমুদ্রসীমা এখন মূল্যবান সম্পদের ভাণ্ডার। ভারত ও মিয়ানমার থেকে অর্জিত সমুদ্রসীমায় ২৬টি ব্লক রয়েছে। ইজারা দিয়ে এসব ব্লক থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭ সালে ‘ব্লু ইকোনমি সেল’ গঠন করে সরকার।

সমুদ্রসম্পদ সুরক্ষায় ২০১৯ সালে মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট করেছে সরকার। সমুদ্রসীমা বিজয়ের ফলে ব্লু ইকোনমির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুই ধরনের সম্পদ অর্জন করেছে। এর একটি হলো প্রাণিজ, অপরটি অপ্রাণিজ। প্রাণিজের মধ্যে রয়েছে মৎস্যসম্পদ, সামুদ্রিক প্রাণী, আগাছা-গুল্মলতা ইত্যাদি। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের বিপুল পরিমাণ আগাছা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি করা যায়। এসব আগাছার মধ্যে ইসপিরুলিনা অত্যধিক মূল্যবান। সমুদ্রে শুধু মাছ রয়েছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির। এছাড়া চিংড়ি ৩৬ প্রজাতির, কাঁকড়া ২০ প্রজাতির এবং শামুক-ঝিনুক রয়েছে ৩৩৬ প্রজাতির। সেইসঙ্গে রয়েছে শ্যালফিশ, অক্টোপাস, হাঙ্গরসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী।

অপ্রাণিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে খনিজ ও খনিজ ধরনের সম্পদ, যেমন তেল, গ্যাস, চুনাপাথর প্রভৃতি। আরও রয়েছে ১৭ ধরনের মূল্যবান খনিজ বালি। যেমন জিরকন, রোটাইল, সিলিমানাইট, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, কায়ানাইট, মোনাজাইট, লিক্লোসিন ইত্যাদি, যার মধ্যে মোনাজাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সিমেন্ট বানানোর উপযোগী প্রচুর ক্লে রয়েছে সমুদ্রের তলদেশে। এছাড়া সামুদ্রিক মাছ সঠিকভাবে আহরণ করতে পারলে নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা সম্ভব। তাছাড়া সামুদ্রিক মাছ থেকে খাবার, মাছের তেল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, সস, চিটোসান প্রভৃতি তৈরি করা সম্ভব, যার ফলে নতুন ধরনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে দেশের জন্য প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতে পারে। এরই মধ্যে সামুদ্রিক অর্থনীতি বিকাশের জন্য ২৬টি সম্ভাবনাময় কার্যক্রম চিহ্নিত করেছে সরকার। এগুলো হলো শিপিং, উপকূলীয় শিপিং, সমুদ্রবন্দর, ফেরির মাধ্যমে যাত্রীসেবা, অভ্যন্তরীণ জলপথে পরিবহন, জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ রিসাইক্লিং শিল্প, মৎস্য, সামুদ্রিক জলজ পণ্য, সামুদ্রিক জৈব প্রযুক্তি, তেল ও গ্যাস, সমুদ্রের লবণ উৎপাদন, মহাসাগরের নবায়নযোগ্য শক্তি, ব্লু এনার্জি, খনিজ সম্পদ (বালি, নুড়ি ও অন্যান্য দ্রব্য), সামুদ্রিক জেনেটিক সম্পদ, উপকূলীয় পর্যটন, বিনোদনমূলক জলজ ক্রীড়া, ইয়টিং এবং মেরিনস্, ক্রুজ পর্যটন, উপকূলীয় সুরক্ষা, কৃত্রিম দ্বীপ, সবুজ উপকূলীয় বেল্ট বা ডেল্টা পরিকল্পনা, মানবসম্পদ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নজরদারি এবং সামুদ্রিক সমষ্টি স্থানিক পরিকল্পনা (এমএসপি)।

বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভাবনায় ১০টি পয়েন্ট সবচেয়ে বেশি গুরত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সমুদ্রে পাওয়া এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের যথাযথ ব্যবহারে সামুদ্রিক অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের জন্য ট্রাম্পকার্ড। পয়েন্টগুলো হলো

ক. কিছুদিন আগে গৃহীত হয়েছে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০। এ মহাপরিকল্পনায় সমুদ্র অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় নীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পাঁচ ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সামুদ্রিক সম্পদের বহুমাত্রিক জরিপ দ্রুত সম্পন্ন করা। এর মাধ্যমে সরকার সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর জন্য প্রথম ও প্রধান কাজটিই হাতে নিয়েছে।

খ. সমুদ্রবিজয়ের ফলে বাংলাদেশ যে অঞ্চলের মালিকানা পেয়েছে, সেখানে অন্তত চারটি ক্ষেত্রে কার্যক্রম চালানো হলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি মার্কিন ডলার উপার্জন করা সম্ভব। ক্ষেত্র চারটি হলোÑতেল-গ্যাস উত্তোলন, মৎস্য সম্পদ আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও পর্যটন।

গ. সুস্থির সামুদ্রিক কার্যক্রমের নিমিত্তে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক ব্লু প্রোগ্রামের (চজঙইখটঊ) জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন করা হয়েছে, যার সাইনিং সম্পাদিত হয়েছে ২০১৮ সালের নভেম্বরে। বাংলাদেশে সামুদ্রিক খাতেও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে।

ঘ. বঙ্গোপসাগর তীরে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও থাই উপকূলে ১৪৫ কোটি মানুষের বাস। বাংলাদেশের অবস্থান কেন্দ্রে। ফলে এখানে বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা থাকায় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার ভালো সুযোগ রয়েছে।

ঙ. বর্তমানে বাংলাদেশের ট্রলারগুলো উপকূল থেকে ৩৫-৪০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে মাছ আহরণ করে। কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০০ নটিক্যাল মাইল। আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করে সমুদ্র অর্থনীতিতে দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে।

চ. জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে বাংলাদেশ। এরপর থাইল্যান্ড, ভারত ও চীন। নতুন জলসীমার অধিকার পাওয়ায় ব্লু ইকোনমি প্রসারে বাংলাদেশের এ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তাই সমুদ্র খাতের এ সুযোগ লুফে নেয়াই এখন দরকার।

ছ. ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২১টি সদস্য দেশের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (ওঙজঅ)’-এর সদস্য বাংলাদেশ। সুনীল অর্থনীতি নিয়ে এ জোটের বিভিন্ন দেশ কাজ করছে।

জ. ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির হিসাবমতে, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ৭০ শতাংশ আসে সমুদ্রে মাছ আহরণ, সামুদ্রিক খাদ্য ও বাণিজ্যিক সমুদ্র পরিবহন থেকে। প্রায় তিন কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসব কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে কেবল সামুদ্রিক মাছ আহরণে নিয়োজিত আছে ৫০ লাখ মানুষ। এ খাতের আধুনিকায়ন হলে এ সংখ্যা বাড়া কেবল সময়ের ব্যাপার।

ঝ. সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল ‘ক্লে’র সন্ধান পাওয়া গেছে বঙ্গোপসাগরের প্রায় ৩০ থেকে ৮০ মিটার গভীরে। অগভীর সমুদ্রের ক্লে উত্তোলন করা গেলে বাংলাদেশের সিমেন্টশিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এছাড়া সমুদ্রতলদেশে মহামূল্যবান ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিশ্বে এ ধাতু দুটির চাহিদা কীরূপ তা সহজে অনুমেয়।

ঞ. সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতি থেকে যদি চার শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যায়, তাহলে ‘ভিশন ২০৪১’ পূরণ করা সহজ হবে। ফলে আমরা এই সময়ের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যাব।

সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জগুলো হলোÑপর্যাপ্ত নীতিমালা ও সঠিক কর্মপরিকল্পনার অভাব, দক্ষ জনশক্তির অভাব, প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব, সম্পদের পরিমাণ ও মূল্য সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাব, মেরিন রিসোর্সভিত্তিক গবেষণা না হওয়া, সুনীল অর্থনীতি-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক যোগাযোগের অভাব এবং গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য গবেষণা জাহাজ না থাকা।

বর্তমান সরকার সুনীল অর্থনীতির সুযোগগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর বিশেষ নজর দিচ্ছে। সমুদ্র গবেষণা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য সাম্প্রতিক কালে সরকার বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং একটি মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছে। সমুদ্র অর্থনীতির বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও হয়েছে। সমঝোতা চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপান। এছাড়া হাতে নেয়া হয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ এবং তৈরি করা হচ্ছে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এছাড়া গ্যাসসহ অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ উত্তোলন, মৎস্যসম্পদ আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও পর্যটনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনামাফিক কার্যক্রম পরিচালনা করা গেলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিবছর আড়াই লাখ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। অপার সম্ভাবনাময় এ খাতকে কাজে লাগানো জরুরি। সমুদ্রের তলদেশে কী ধরনের সম্পদ রয়েছে, সেগুলো আহরণ করতে হলে কোন ধরনের প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ জনবল প্রয়োজন, তা পরিকল্পনামাফিক নির্ধারণ করে সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ব্লু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতির সুদূরপ্রসারী অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ সরকারকে নিতে হবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত ও সঠিক পরিসংখ্যান করে বিনিয়োগকারীদের এই খাতে কীভাবে আকৃষ্ট করা যায় এবং এই খাতের কীভাবে উন্নয়ন করা যায়, সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভরতা ও দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ সম্পর্কে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানায় যেসব অনাবিষ্কৃত সমুদ্রসম্পদ আছে, সেগুলোর বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিবেশবান্ধব সংগ্রহ এবং টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে সুনীল অর্থনীতি এগিয়ে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ও পরামর্শ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে, যা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া সমুদ্র বিষয়ে পরিকল্পনা, জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় ক্ষমতা বিকাশের জন্য নানা রকম উদ্যোগ নেয়া এবং সম্পদ সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের জন্য কর্মপন্থা প্রণয়ন, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও সুবিধা বৃদ্ধি এবং পর্যটন ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমালঙ্ঘন আইন, সিসিআরএফের ধারাগুলোর সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন ও প্রসারের জন্য সব ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ ও পর্যাপ্ত পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। আশা করা যায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে সুনীল অর্থনীতি।

শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০