বাংলাদেশ ও ভারত এ দু’দেশজুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবন। এটি ম্যানগ্রোভ বন হিসেবেও পরিচিত। ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ সুন্দরবনের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। সুন্দরী গাছের পাশাপাশি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত সুন্দরবন।
সুন্দরবনের ভেতরে অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। এসব স্থান নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জন্য আকর্ষণীয়। আর এ আকর্ষণে হাজার হাজার পর্যটক, গবেষক এসব স্থানে ভ্রমণ করে থাকেন। শীতকালে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। সুতরাং এ সময়ে অলসতায় দিন না কাটিয়ে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। সুন্দরবনের কয়েকটি আকর্ষণীয় স্থান
কটকা
সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে কটকা অন্যতম। এখানে রয়েছে অনেক ছোট-বড় খাল। এসব খালের পাশে দেখা যায় চিত্রল হরিণ, বানর প্রভৃতি। কটকায় বেড়াতে গিয়ে হরিণের পাল দেখে বিমুগ্ধ হবে যে কোনো পর্যটক।
কটকা বিচ
কটকার সমুদ্রসৈকত এক কথায় অসাধারণ। সুন্দরবনের আকর্ষণীয় বিচ এটি। বিচের পাশে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু একটি টাওয়ার। এ টাওয়ার থেকে বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
জামতলা সৈকত
কটকা ওয়াচ টাওয়ার থেকে পূর্বদিকে দুই কিলোমিটার হেঁটে গেলে দেখা যাবে জামতলা সমুদ্রসৈকত। চলার পথে চোখে পড়বে বিভিন্ন আকারের জামগাছ, যা থেকে সৈকতটি নামকরণ করা হয়েছে। সৈকতটি বেশ নির্জন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
কচিখালী
মংলা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কচিখালী, যা সুন্দরবনের আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান। এখানে প্রায় তিন কিলোমিটার বিস্তৃত সমুদ্রসৈকত রয়েছে। আছে বন বিভাগের নিজস্ব রেস্ট হাউজ ও কোস্ট গার্ডের অস্থায়ী টহল অফিস।
করমজল
সুন্দরবন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেওয়ার অন্যতম স্থান হচ্ছে করমজল। একে বন্যপ্রাণীর প্রজননকেন্দ্রও বলা হয়। এই প্রজনন কেন্দ্রে রয়েছে কুমির, হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন প্রাণী। এতে বাঘ ও হরিণের কঙ্কাল, কুমিরের নমুনা ডিম, মাথাসহ বিভিন্ন প্রাণীর নমুনা রয়েছে।
হার বাড়িয়া
মংলা থেকে ২০ কিমি. দূরে হার বাড়িয়া অবস্থিত। এর প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয। এখানে উন্নয়নের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে এ স্থানটিও করমজলের মতো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে এখানকার বন্য সংরক্ষকরা মনে করেন।
নীলকমল
সুন্দরবনের নীলকমল হিরণ পয়েন্ট নামেই বেশি পরিচিত। বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এটি। হরিণের আদর্শ বিচরণ ক্ষেত্রের কারণে এর নাম হয়েছে হিরণ পয়েন্ট। এখানে আরও আছে বাঘ, বন্য শূকর, বানর, উদবিড়াল, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখি। নীলকমলের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও বন্যপ্রাণী দেখে জনমানবের মন উৎফুল্ল হয়ে উঠে। নীলকমল নামটিকে আরও বেগবান করতে এখানকার অভয়ারণ্য কেন্দ্রের অফিস গৃহ, বনকর্মীদের বাসগৃহ, পিকনিক স্পট সবই নীল রঙের করা হয়েছে।
দুবলার চর
দুবলার চর সুন্দরবনের অন্তর্গত একটি ছোট চর বিশেষ। মাছ ধরার মৌসুমে এখানে জেলেদের বসতি গড়ে উঠে। তাই অনেক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে। জেলেদের জীবনযাত্রা, তাদের সংগ্রামমুখর জীবন, মাছ ধরার দৃশ্য ও আহরিত মাছ শুঁটকি করার দৃশ্যও দেখা যায়। প্রতি বছর এখানে রাস পূর্ণিমায় বসে রাসমেলা। লাখো মানুষের আগমন ঘটে এ মেলায়। তীর্থযাত্রীদের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিপুলসংখ্যক পর্যটকও ভিড় করেন এ সময়ে।
শেখের টেক
সুন্দরবনের মধ্যে শিবসা নদীর তীরে শেখের টেক মন্দিরটি অবস্থিত। প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো মন্দির এটি। এখানে শেখের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। শেখের টেক মন্দিরের সঠিক ইতিহাস আজও জানা যায়নি। এ মন্দিরটি ছোট ছোট ইট, চুন ও সুরকি দিয়ে গাঁথা। মন্দিরটির আশেপাশের পরিবেশ দেখে মনে হয় কোনো এক সময় এখানে জনবসতি ছিল। সংস্কারের অভাবে বর্তমানে এটি গভীর জঙ্গলের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে। পর্যটকরা নানা কৌতূহল ও প্রশ্ন নিয়েই এখানে ভ্রমণে আসেন।
হ দূরে কোথাও ডেস্ক