ফারুক রহমান, সাতক্ষীরা: করোনা মহামারির মধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি উপজেলায় বসবারসত উপকূলীয় জনপদের প্রায় ৫০ হাজার জেলে অসহায় হয়ে পড়েছেন। এই মুহূর্তে সুন্দরবনে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় তারা এখন জঙ্গলে যেতে পারছেন না।
কভিড-১৯ এর কারণে মৎস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত সুন্দরবন চর পাটা ও ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার রোধ এবং মাছের নিরাপদ প্রজনন ও সংরক্ষণ করতেই এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন বিভাগ। করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ জেলে বাওয়ালীরা নিরাপদে সুন্দরবনে মাছ ধরতে পারলেও সেটি বন্ধ থাকায় তারা পড়েছে মানবিক বিপর্যয়ে। অবিলম্বে পারমিট চালু করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পূর্ব বিভাগের চারটি রেঞ্জ শরণখোলা, চাঁদপাই, খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকার ইতিমধ্যে ২৫ ফুটের নীচের প্রস্তের প্রায় চার শতাধিক খালকে নিষিদ্ধের তালিকায় নেওয়া হয়েছে। তবে ২৫ ফুটের অধিক প্রস্থের খাল ও বনের নদী এলাকা এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। এ পরিস্থিতিতে চরম হতাশা আর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে উপকুলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার জেলে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বনের মধ্যে দিয়ে ভোলা, বলেশ্বর, শ্যালা, পশুরসহ ১৩টি বড় নদ-নদী ও ৪৫০টি ছোট খাল প্রবাহিত হয়েছে। এ সব নদী ও খালে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও লবস্টার পাওয় যায়।
এ ছাড়াও রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন। জুলাই ও আগস্ট মাস সুন্দরবনে মাছের প্রজনন মৌসুম। এ প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের ছোট ছোট খালে মাছের আধিক্য বেশি থাকার সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু জেলে গোপনে ছোট খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে থাকে।
এ কারণে বনের মৎস্য ও অন্য জলজ প্রাণির নিরাপদ প্রজনন ও সংরক্ষণসহ ও বিষ প্রয়োগ বন্ধে এ দু’মাস সুন্দরবনের অধিকাংশ খালে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. এনামুল হক বলেন, পাস-পারমিট নিতে আসা জেলেদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকরণে করোনার পর মাছ আহরণের জন্য জেলেদের সীমিত আকারে পাস-পারমিট দেওয়া হবে। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে বন বিভাগের পাশাপাশি সুন্দরবনসহ ব্যবস্থাপনা কমিটি, সিপিজি, ভিটিআরটি, ওয়াইল্ড টিমের সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
###