প্রতিনিধি, খুলনা: তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে পর্যটকদের পদচারণা আর জেলেদের মাছ আহরণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙেছে সুন্দরবন। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে পর্যটক, বনজীবী ও মৎস্যজীবীদের জন্য নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে এই নীরবতার অবসান ঘটে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনের। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রথম দিন ১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবন গেছে ৯টি জাহাজ। এ জাহাজগুলোয় দেশি-বিদেশি ৩৪৯ পর্যটক রয়েছেন।
বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ছিল সুন্দরবনে মাছ শিকার ও ভ্রমণ।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সহ-সাধারণ সম্পাদক ও এভারগ্রিন ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী মাঝহারুল ইসলাম কচি বলেন, ‘প্রথম দিনই ৯টি জাহাজ সুন্দরবন গেছে। এর মধ্যে সাতটি খুলনার, একটি মোংলার ও একটি ঢাকার। খুলনার সাতটি জাহাজ জেলখানা ঘাট এলাকা থেকে সকাল ৭টা থেকে ছাড়া শুরু হয়। বেলা ১১টায় সবশেষ জাহাজটি মোংলা থেকে ছেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘সাগর উত্তাল রয়েছে। তাই এখন হিরনপয়েন্ট ও দুবলার চরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ১ নভেম্বর থেকে সেসব জায়গায় যাওয়ার পথ উš§ুক্ত হবে। তাই এখন জাহাজগুলো করমজল, হারবারিয়া, কটকা, কচিখালী ও ডিমেরচর রুটে যাতায়াত করবে।’
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ওসি হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘শুক্রবার থেকে সুন্দরবনে জেলে ও পর্যটকদের জন্য পারমিট দেয়া শুরু হয়। এজন্য নির্ধারিত স্টেশনগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলে ও পর্যটকরা এদিন সকাল থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ করছেন। পর্যটকরা বনে যাওয়ার সময় প্লাস্টিকের বোতল, একবার ব্যবহার হয় এমন প্লাস্টিকের খাবার প্লেট, সফট ড্রিংকসের বোতল ও ক্যান নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে এবার কঠোর অবস্থানে সুন্দরবন বন বিভাগ। তারপরও যদি কেউ প্লাস্টিকের এসব সামগ্রী বনের মধ্যে নিয়ে যান, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। করা হবে জরিমানা।’
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে বর্তমানে ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দুই লাখ হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, সুন্দরীসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড ও ৩০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জলভাগে কুমির, ছয় প্রজাতির ডলফিনসহ ২৯১ প্রজাতির মাছ রয়েছে।
ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবনের বুক চিরে রয়েছে ৪০০ নদীনালা ও ২০০ খাল। বাঘ, হরিণ, শূকরসহ ২৮৯ প্রজাতির স্থল ও জলজ প্রাণী বাস করে এখানে। আছে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, আট প্রজাতির উভচর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী।
মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম হওয়ায় জুন, জুলাই ও আগস্টÑএই তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এ সময়ে বনে প্রবেশ করতে পারেন না জেলে, বাওয়ালি, মৌয়াল কিংবা পর্যটকরা। কিংবা পর্যটকরা।