সার্স ভাইরাসজনিত রোগের (কভিড) সংক্রমণে কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পরীক্ষা শুরু হলেও বর্তমানে অনেকটা বন্ধ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাকরিপ্রার্থীরা। একদিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বন্ধ, অন্যদিকে পরীক্ষা স্থগিত হলেও থেমে নেই বয়স। যাদের মাস্টার্স শেষ করে চাকরি করার কথা তাদের অনেকের আবার অনার্সই শেষ হয়নি বৈশ্বিক মহামারির কারণে। উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে লেখাপড়া শেষ করে চাকরিপ্রত্যাশীরা যখন একটা চাকরি জোগাড় করতে পারে না তখন লজ্জায় অভিভাবকের সামনে মুখ দেখাতে পারে না। আর এর মাধ্যমেই আস্তে আস্তে তারা বেঁচে থাকার আগ্রহ হারায়।
চাকরিপ্রত্যাশীদের অনেকেই বিভিন্ন চাকরিতে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত। কিন্তু কভিড এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। যেমন: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বা পিটিআইয়ে নবম গ্রেডের ইনস্ট্রাক্টর (বিজ্ঞান, কৃষি, শারীরিক শিক্ষা এবং চারু ও কারুকলা) পদে মোট ৯৮ জনকে বিপিএসসি ২৮ অক্টোবর ২০২০ চূড়ান্ত সুপারিশ করে। চূড়ান্ত সুপারিশের দীর্ঘ ১৪ মাস হলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও গেজেট প্রকাশ করতে পারছে না। অনেক পরিশ্রম করে বেকার যুবকরা যখন তাদের বিশ্বাসের আশ্রয়স্থল পিএসসি কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে চাকরিতে যোগদানের অপেক্ষায় প্রহর গুনে আর স্বপ্ন দেখে তখন সত্যি ভালো লাগে। কিন্তু এ অপেক্ষা যখন মাসের পর মাস পেরিয়ে বছর পেরিয়ে যায়, তখন অপমান আর লজ্জা তাদের যেন আত্মহত্যার দিকে প্ররোচিত করে। এ অবস্থায় যদি আক্ষেপ ও হতাশা নিয়ে তাদের কেউ আত্মহত্যা করে তখন দায়ভার নেয়ার কেউ থাকবে?
২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল অর্থাৎ প্রায় ৩ বছর আগে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বা পিটিআইগুলোয় বিভিন্ন বিষয়ের ইনস্ট্র্রাক্টর পদ শূন্য থাকায় নবম গ্রেডের ৭২টি বিষয়ভিত্তিক ইন্সট্রাক্টরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তারই ধারাবাহিকতায় লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভার মাধ্যমে বিপিএসসি ২৮ অক্টোবর, ২০২০ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৯৮ জনকে চূড়ান্ত সুপারিশ করে। সামান্য ৯৮ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যদি ৩ বছর লাগে, তবে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন কীভাবে দেখব? অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সদিচ্ছার মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে ৪০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করেছে। অন্যদিকে ২০১৮ সালে ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) এ ৭৭টি পদের বিপরীতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়ে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও মৌখিক পরীক্ষা আটকে আছে। দীর্ঘদিন পর কখনও যদি কোনো ইন্সট্রাক্টর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় তাও আবার বিভিন্ন মামলা জটিলতায় স্থগিত হয়।
এখন চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করলে আমাদের মাথাব্যথা শুরু হয়। কিন্তু তার প্রকৃত কারণ আমরা খুঁজে দেখি না। দীর্ঘ সাধনার পর যখন শুনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল, পরীক্ষা স্থগিত, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রভৃতি তখন একজন শিক্ষিত বেকারে আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ থাকে কি? এ অবস্থায় শিক্ষা আর সনদ ও ডিগ্রি কোনো কাজে লাগে না।
পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর সুপারিশপ্রাপ্তদের প্রায় সবাই বেকার। ইনস্ট্রাক্টর পদে যোগদানের আশায় তাদের বেশির ভাগই নতুন করে কোথাও চাকরির পরীক্ষায়ও অংশ নিচ্ছে না। আবার কেউ ছোট চাকরিতে যোগ দেয়নি। ফলে তাদের একমাত্র এবং শেষ ভরসা পিটিআই। কিন্তু বছর পার হলেও যখন প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না তখন ভবিষ্যতের অনেক পরিকল্পনা আটকে যাচ্ছে। পরিবার, স্বজন এবং সমাজের অনেকেই তাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাওয়ার কথা বিশ্বাস করছে না। তাই লজ্জায় অনেকে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। সন্তান হিসেবে পরিবারের একমাত্র ভরসা হিসেবে থাকলেও চাকরিতে যোগ দিতে না পারায় বাবা-মায়ের কথা রাখতে পারছে না। বয়োবৃদ্ধ পিতা-মাতার শেষ ভরসা যখন সুপারিশ পেয়েও যোগদান করতে পারে না তখন অভিভাবকের অনেকেই ক্ষিপ্ত হয়ে শোকে মরার উপক্রম। এ অবস্থায় দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করা না গেলে তারা চাকরিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এমনকি হতাশ হয়ে আত্মহত্যার মতো পথও বেছে নিতে পারে। তাই অনতিবিলম্বে বিপিএসসি কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত ইনস্ট্রাক্টরদের পদায়নের মাধ্যমে যোগদানের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
শাহাদাত আনসারী
মুক্ত লেখক
ansarisahadat4@gmail.com