নীলফামারীর ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের হংসরাজ গ্রামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সুপারির চারা উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান ও স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। ওই গ্রামের কাজেম আলীর ছেলে আশরাফুল আলম তাদেরই একজন।
আশরাফের নার্সারি থেকে সুপারির চারাসহ নানা প্রজাতির চারা এখন স্থানীয় বাজার ছাড়াও বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে। চলতি বছর ৪০ শতাংশ জমিতে সুপারির নার্সারি করেছেন তিনি। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ওই জমিতে ১০ থেকে ১২ হাজার চারা বিক্রি করা যাবে। উৎপাদিত চারা শতভাগ বিক্রি হলে অধিক লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তিনি। আশরাফুল আরও বলেন, একই এলাকার আদর্শ কৃষক সুবক্তগীন অনিকেতের পরামর্শে সুপারির চারা উৎপাদনে সিদ্ধান্ত নিই।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারা বাগানে কাজ করছেন আশরাফ। সুপারি চারার পাশাপাশি লেবু, তেজপাতা, লবঙ্গ, দারুচিনি গাছের চারার সারি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। এখানে মাটির বেডে চারা রোপণ ও বেড প্রস্তুতের কাজও চলছে। ছয় ইঞ্চি পরপর লাগানো হয়েছে সুপারি। এ সুপারি থেকে চারা গাছের জš§ হয়। ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে বিক্রি শুরু করেন তিনি। একেকটি চারার দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে।
আশরাফ বলেন, নার্সারি একটি লাভজনক ব্যবসা। তাই অনিকেত ভাইয়ের পরামর্শে সুপারি চারার সঙ্গে তেজপাতা, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচসহ ছয় প্রজাতির নার্সারি করছি। চারা চাষে কোনো লোকসান নেই। নার্সারি করার এটিও একটি কারণ। এ ব্যবসায় স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে ১০ শতাংশ জমি কিনেছেন।
তিনি জানান, একটি সুপারি চারায় খরচ হয় ছয় থেকে আট টাকা। আর সে চারা ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ বছর সার, বীজ, সেচ, পরিচর্যা ও পরিবহন খরচ বাদে এবং ৪০ শতাংশ জমির চারা বিক্রি করে প্রায় তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি।
এছাড়া স্থানীয় বেকার শ্রমিকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। প্রতিদিন চার-পাঁচজন শ্রমিক তার নার্সারিতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। শ্রমিক সতীশ চন্দ্র রায় বলেন, আগে ভাবতে হতো কার বাড়িতে কাজ করব, কীভাবে বাজার খরচের টাকা পাব? কিন্তু এখন আর তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। প্রতিদিন এখানে কাজ পাচ্ছি। সন্ধ্যা হলে হাজিরার টাকা পাই। শ্রমিক দুলাল রায়ও একই কথা বলেন।
আশরাফুল আলমের মতে, উত্তরাঞ্চলের মানুষের অতিথি আপ্যায়নে পান-সুপারির বিকল্প নেই। বিশেষ করে বিয়ে, মুখে ভাতসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পান-সুপারি প্রয়োজন। তাই মহল্লা থেকে শুরু করে স্থানীয় পাইকার ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ সিলেট, পাবনা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটের পাইকাররা এসে সুপারি চারা নিয়ে যান।
সুপারি গাছ রোপণ করতে জায়গা কম লাগে। তাই লোকজন বাড়ির আনাচে-কানাচে, এমনকি উঠানেও রোপণ করে থাকেন। কোনো কোনো সময় একটি সুপারি পাঁচ টাকায়ও বিক্রি করা হয়। সুপারি চাষে খরচ তুলনামূলক কম। তাই অল্প খরচে বেশি লাভ হয় সুপারি চাষ করলে।
হরিণচড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম বলেন, এক সময় এ গ্রামের মানুষ প্রায় উপোস করত। এখন তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কারণ, গ্রামের মানুষ এখন নানাভাবে কর্মমুখী হয়েছে। এর মধ্যে নার্সারি অন্যতম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচারক আবুল কাশেম আজাদ বলেন, জেলায় ছয় হাজার ৫৭৯টি ছোট-বড় নার্সারি রয়েছে। জীবন রক্ষাকারী গাছ ও সামাজিক বনায়ন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি নানা ফুল ও ফল মানুষের কাজে আসছে। সুপারি নার্সারির সংখ্যা বাণিজ্যিকভাবে বৃদ্ধির জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তারা নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।
তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
মন্তব্য