Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:32 pm

সুপেয় পানির সংকটে চট্টগ্রামের নগরবাসী

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মহানগরের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ব্যবহারের পানি প্রতিদিনের মোট চাহিদা ৫০ কোটি লিটার। এর বিপরীতের চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রায় ২৮ থেকে ৩০ কোটি সরবরাহ করছে। যদিও গত শীতকালে ৪৫ কোটি লিটার পানির সরবরাহ করেছিল। কিন্তু গত এক মাস ধরে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেশি হওয়ায় পানি পান করা যাচ্ছে না। এতে নগরীর ৭০ লাখ বাসিন্দা বিপাকে পড়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, সংকট নিরসনে ওয়াসা কিছু গভীর নলকূপ চালু করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। গত ফেব্রুয়ারি থেকে লবণাক্ততার সমস্যায় পড়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা। চৈত্র ও বৈশাখে বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই লেকের পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় জোয়ারের সঙ্গে সাগরের লোনা জল কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে প্রবেশ করেছে। এতে প্রথমে ওয়াসার মোহরা প্রকল্পে এবং পরে মদুনাঘাট ও পোমরা থেকে সরবরাহকৃত পানিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়। কাপ্তাই থেকে পানি না আসায় নদীতে পানির সংকটও দেখা দিতে থাকে। জোয়ারের সময় সাগরের পানি এসে বাড়িয়ে দেয় লবণাক্ততার পরিমাণ। সমস্যা-সমাধানে ওয়াসা গভীর নলকূপের পানির মিশ্রণ দিয়ে লবণাক্ততা কমিয়ে আনার চেষ্টা করে। এতে সাময়িক লবণাক্ততার পরিমাণ কমলেও ওয়াসার উৎপাদনও নিচে নেমে আসে। পানির উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা দিতে শুরু করে। এছাড়া এপ্রিলের শুরু থেকে গরম বেড়ে যাওয়ায় পানির চাহিদাও বেড়ে যায়।

কোনো এলাকায় ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহের অভিযোগও আসছে। এমন সংকটের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে ওয়াসা। গত মঙ্গলবার পানির দাবিতে গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। গতকাল ওয়াসা কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম। পরে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়।

লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা শেখ মুহিউদ্দিন বলেন, হাইলেভেল রোডের ওয়াসার পাইপলাইনে লিকেজের কারণে প্রচুর পানির অপচয় হচ্ছে। তিন

 মাস  আগে ওয়াসাকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পানির হাহাকার অবস্থা চললেও ওয়াসা অপচয় রোধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এতে বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসা লাভজনক হচ্ছে। অন্যদিকে চান্দগাঁও খাজা রোডের বাসিন্দা মারুফ হাসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শনি, সোম ও মঙ্গলবার পানি থাকে না। এর মধ্যে যে পানি আসছে, সেগুলো দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত। গত কয়েক মাস ধরে এমন পানি আসছে। নতুন করে যোগ হয়েছে লবণাক্ততা। এখন যে পানি আসছে, সেগুলো কালো রংয়ের নোংরা পানি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহর ব্যবহƒত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগটি রিসিভ করেননি। পরে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও রিসিভ করেনি। পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, গভীর নলকূপের পানির মিশ্রণের মাধ্যমে পানিতে লবণাক্ততা কমানোর চেষ্টা চলছে। তবে বৃষ্টি ছাড়া এটা থেকে পরিত্রাণের বিকল্প কোনো পথ নেই।

উল্লেখ্য, নগরবাসীর চাহিদার ৮৫ শতাংশ পানি সরবরাহ করে ওয়াসা। তিনটি পানি সরবরাহ প্রকল্প চলমান আছে। এ তিন প্রকল্প শেষ হলে চট্টগ্রাম মহানগরীর পুরো এলাকা পানি সরবরাহের আওতায় আসবে।