চীনে আরও ৫১৬১ পণ্যের শুল্কমুক্ত

সুবিধা পেল বাংলাদেশ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : চীনের বাজারে রপ্তানিতে বাংলাদেশে তৈরি আরও ৫ হাজার ১৬১ পণ্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পেয়েছে; যা আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন সুবিধা কার্যকর হবে বলে গতকাল শুক্রবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শুল্ক পণ্যের ৯৭ শতাংশে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিল চীন সরকার। চীনের বাজারে রপ্তানিতে আগে থেকে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের (আপটা) আওতায় ৩ হাজার ৯৫ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে থাকে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ৮ হাজার ২৫৬ পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিল চীন সরকার।

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নতুন এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, সরকারের অর্থনৈতিক কূটনীতির অংশ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ করে চীন সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়। এ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের স্টেট কাউন্সিলের কাস্টমস ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি এ সুবিধা প্রদান করে নোটিস জারি করে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চীন বাংলাদেশের বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার। গত (২০১৮-১৯) অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার বিপরীতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল বিলিয়ন ডলারের নিচে।

বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সার্বিক দিকনির্দেশনায় এবং বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের নেতৃত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে চীনের সঙ্গে বিনিময়পত্র সই করে। এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে ভুটান, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে পিটিএ চূড়ান্তকরণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার মারকোসার জোটের দেশসমূহ, পূর্ব ইউরোপের বাণিজ্য জোটের সঙ্গে এফটিএ চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে।

জানা যায়, চীন ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (এলডিসি) শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করে। প্রাথমিকভাবে এ সুবিধার আওতায় বাংলাদেশসহ ৩৩টি স্বল্পোন্নত দেশ, যাদের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে তাদের চীনের ৬০ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করা হয়। কিন্তু চীন প্রদত্ত এ সুবিধা বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতার অনুকূল কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা আছে এমন অনেক পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি সম্ভাবনাময় পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদানের জন্য চীনকে অনুরোধ করে।

যদিও চীন ২০১৩ সালে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৪০টি দেশে উন্নীত করে। এর মধ্যে ২৪টি স্বল্পোন্নত দেশ, যারা ১ জানুয়ারি ২০১৫-এর আগে চীনের সঙ্গে বিনিময় পত্র স্বাক্ষর করেছে, তারা ৯৭ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে, ১২টি স্বল্পোন্নত দেশ যারা ১ জানুয়ারি ২০১৫-এর পরে বিনিময় পত্র স্বাক্ষর করেছে তারা ৯৫ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে এবং বাংলাদেশ ও মৌরিতানিয়া মাত্র ৬০ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে এই সুবিধা পেয়ে আসছিল।

বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীন অবহিত করে যে, বিনিময় পত্র স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ৯৭ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। তবে শর্তারোপ করে যে, স্বল্পোন্নত দেশকে প্রদত্ত সুবিধা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের (আপটা) আওতায় স্বল্পোন্নত দেশের জন্য বিদ্যমান সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না।

উল্লেখ্য, আপটার আওতায় শুল্ক সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য মূল্য সংযোজনের হার ৩৫ শতাংশ হলেও স্বল্পোন্নত দেশের জন্য চীনের প্রদত্ত শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় মূল্য সংযোজনের হার ৪০ শতাংশ। চীনের আরোপিত শর্ত মেনে স্বল্পোন্নত দেশের জন্য প্রদত্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ করবে কি না, সে বিষয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের মতামত গ্রহণ ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে করে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের জন্য প্রদত্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণের জন্য চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। দীর্ঘ নেগোসিয়েশনের পর গত ১৬ জুন চীন বাংলাদেশকে শর্তহীনভাবে ৯৭ শতাংশ পণ্যে (অর্থাৎ সর্বমোট ৮,২৫৬টি পণ্যে) শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করে আদেশ জারি করে।

চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় এক পক্ষীয়ভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এ সুবিধা প্রদান করায় বাংলাদেশকে এর বিপরীতে কোনো ছাড় দিতে হবে না।

চীন ১৪০ কোটি জনসংখ্যার একটি বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে এ দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, একই উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনের বাজারে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পেলে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা সম্পন্ন প্রায় সব পণ্য চীনে শুল্কমুক্ত কোটামুক্তভাবে প্রবেশের সুবিধা পাবে। ফলে চীনে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়, যা বাংলাদেশের বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০