সুশাসনের ঘাটতি বেড়েই চলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমাদের দেশে যারা দুর্নীতিতে জড়িত তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। দেশে অর্থনীতির অন্যান্য দিকে উন্নতি করেছে এটা অস্বীকার করার উপায় নাই। কিন্তু সুশাসনের যে ঘাটতি আছে তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের এমডি ও সিইও এজেডএম সালেহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
এজেডএম সালেহ বলেন, একটি দেশের পুঁজিবাজার সে দেশের অর্থনীতির দর্পণ হিসেবে কাজ করে। আমাদের পুঁজিবাজারের আজকের যে অবস্থান তাকে খুব একটা খারাপ বলব না, আবার খুব বেশি ভালোও বলব না। একজন বিনিয়োগকারীর পুঁজিবাজারে আসতে হলে কোম্পানিগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। পুঁজিবাজারে প্রতি মুহূর্তে লাভবান হওয়া যাবে তা কিন্তু নয়। এটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের স্থান। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে যে কোম্পানিগুলোর ভালো মৌলভিত্তির সেগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানি মার্কেট খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে এটা হতে পারে। বিশেষ করে অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও, সুদের হার এবং সিআরআর প্রভৃতি বিষয়গুলো নিয়ে যে কাজ হচ্ছে, এটার কারণে সমস্যা হতে পারে। আরেকটি দিক হচ্ছে যখন মার্কেট একটু বাড়ে তখন ব্যাংকগুলো তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেয়। কারণ তাদের আগের যেসব নেগেটিভ ইকুইটি থাকে সেগুলো সমন্বয় করে নেয়। তারা যদি বিক্রি না করে কেনে তাহলে এমন অবস্থা হতো না। তিনি আরও বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার ইকুইটি বেজড। কয়েকটি বহুজাতিক এবং সরকারি কোম্পানি রয়েছে। এগুলো দিয়ে একটি পুঁজিবাজার ভালো করা যাবে না। পুঁজিবাজার ভালো করতে হলে আরও ভালো কোম্পানি আনতে হবে। বিশেষ করে ইউনিলিভার, নেসলে, নিউজিল্যান্ড ডেইরি ফার্মসহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি ভালো কোম্পানিগুলো যদি আনা যায় সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজার ভালো করবে।
ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে যে কোম্পানিগুলোর মৌলভিত্তি দুর্বল সেই কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েই চলেছে। আর ভালো কোম্পানির দর সেভাবে বাড়ছে না। এতে সচেতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যদি ভালো কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ত তাহলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজার সম্পর্কে আস্থা বাড়ত। কয়েক মাস আগেই সূচক ছয় হাজারের উপরে ছিল। কিন্তু এখন ছয় হাজার থেকে নেমে পাঁচ হাজারের মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে। দেশে জিডিপি এবং অন্যান্য উন্নয়ন খারাপ নয়। কিন্ত পুঁজিবাজার সেভাবে বাড়েনি। বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে যেমন আস্থা থাকার কথা সেটি দেখছি না।
অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, যারা দুর্নীতি করেছে এবং ব্যাংক থেকে বেআইনিভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অর্থমন্ত্রী এবং পরিকল্পনামন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই এ কথা বলাতে। কিন্তু হতাশাগ্রস্ত হই যখন দেখি বাস্তবে যা ঘটেছে আর তারা যা বলে তার ভেতর অনেক পার্থক্য। অর্থমন্ত্রী বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন নাই। তিনি বারবার জনসম্মুখে বলেছেন, আমার করার কিছু নেই। যেখানে অর্থমন্ত্রী তার অসহায়ত্বের কথা বলে সেখানে আমাদের কিছু বলার নাই। ফারমার্স ব্যাংকের একই অবস্থা হয়েছে। এ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। আমাদের দেশে যে সব লোক দুর্নীতিতে জড়িত তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অর্থনীতির অন্যান্য দিকে উন্নতি করেছে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। কিন্ত সুশাসনের যে ঘাটতি আছে তা দিন দিন বাড়ছে। এক সময় একটি পরিবার থেকে ব্যাংকে দুজন পরিচালক হতে পারতো কিন্ত এখন সেটি পরিবর্তন করে চারজন হয়েছে। এমনি তো ব্যাংক থেকে টাকা লুট হচ্ছে। আগে পরিচালকের মেয়াদ ছিল ছয় বছর। এখন তা ৯ বছর করেছে। অর্থনীতির অনেক সূচক ইতিবাচক কিন্ত আমাদের ব্যর্থতা হলো সুশাসনের অভাব।
তিনি আরও বলেন, অনেক ব্যাংকের শেয়ারদর ফেস ভেলুুর চেয়ে কম। এটা তো থাকার কথা নয়। অর্থাৎ পুঁজিবাজারের বেশিরভাগ ব্যাংক খাত দখল করে আছে। পুঁজিবাজার যদি টেকসই করতে হয় অবশ্যই ব্যাংক খাতকে ভালো করতে হবে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০