নিজস্ব প্রতিবেদক: সুশাসনের ছয়টি সূচকের মধ্যে চারটিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ আর দুটিতে অবনতি হয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সন্ত্রাসবাদ বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার মান বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের কার্যকারিতা ও বাক-স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অবনতি হয়েছে। এছাড়া দারিদ্র্য নিরসন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও নারী-পুরুষের সমতা অর্জন প্রভৃতিতে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। সরকারের বাস্তবায়িত প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনার (২০১০-২১) মধ্যবর্তী মূল্যায়নে এ চিত্র উঠে এসেছে।
গতকাল বুধবার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি অবহিতকরণ ও প্রতিবেদনের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেক্ষিত পরিকল্পনার সময়ে বেসরকারি বিনিয়োগসহ কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি রয়েছে দুর্বল অবস্থানে। এক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত অবস্থানে যেতে পারেনি দেশ। এছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, জবাবদিহি এবং জাতীয় সঞ্চয়হারে রয়েছে দুর্বলতা। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে অনেক পেছনে অবস্থান (১৪৬ দেশের মধ্যে ১৩৭তম), গণতন্ত্রেও ক্ষেত্রে দুর্বলতা, আমদানি ও রফতানি, রেমিট্যান্স এবং বৈদেশিক বিনিয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্য রেখে কিছুটা দূরে রয়েছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুশাসনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও এখনও অনেক কাজ করার আছে। সরকারের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে দুর্বল সমঅবস্থানে রয়েছে কম্পোডিয়া ও ইথিওপিয়া। কিন্তু বাংলাদেশের পেছনে অতি দুর্বল অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান ও নেপাল। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ড।
প্রধান অতিথির বক্তবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্জন অনেক ভালো। প্রতিবেদনে সার্বিকভাবে প্লাস মাইনাস আছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনার সময় ভয়ঙ্কর কোনো ব্যর্থতা বা ফেইলিওর নেই। হতাশা বা লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু নেই। জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে অনেক অনেক ভালো করছি। মূল্যস্ফীতি ধরে রাখতে পেরেছি। রেমিট্যান্স, ম্যানুফ্যাকচারিং, সেবা খাত, অবকাঠামো উন্নয়ন বিদ্যুৎ উৎপাদন, গড় আয়ু, দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি, মানব উন্নয়ন এবং নারীদের অংশগ্রহণসহ অনেক ক্ষেত্রেই অর্জন উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, আঙ্কটার্ডেও হিসাব মতে বিনিয়োগ বাড়ছে। গত ১১ বছরে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে কর জিডিপি ভালো হয়নি। ব্যাংক খাতে সমস্যা রয়েছে। সরকার এক্ষেত্রে উন্নতি করতে কাজ করছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। যে কোনো পরিকল্পনার মূল্যায়ন জরুরি। তাহলে এর অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আশা করছি, ভবিষ্যতে আরও ভালো প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।
এইচটি ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের পর মেধাবীদের নিয়ে এসে পরিকল্পনা কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন কাজে লাগিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারও মেধাবীদের কাজে লাগাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ভালো করছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনে থাকলে ভালো হতো। এছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ হচ্ছে। কিন্তু আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপির ৩১ শতাংশ। কিন্তু অর্জন হয়েছে ৩০ দশমিক পাঁচ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল জিডিপির ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ, অর্জন হয়েছে ২৩ দশমিক এক শতাংশ। তবে সরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। সরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল জিডিপির সাত দশমিক এক শতাংশ আর অর্জন হয়েছে সাত দশমিক চার শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়ের লক্ষ্য ছিল জিডিপির ২৯ দশমিক সাত শতাংশ, অর্জন হয়েছে ২৯ দশমিক ছয় শতাংশ। এছাড়া জবাবদিহির ক্ষেত্রে ২০১০ সালে ৩৬ দশমিক ৯৭ থেকে অবনতি হয়ে ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক শূন্য তিনে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জিডিপির লক্ষ্য অনেকাংশেই পূরণ হয়নি। কেননা সে সময় প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা হওয়ায় একটু উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল। ফলে লক্ষ্য অর্জিত না হলেও ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে।
ড. শামসুল আলম বলেন, সুশাসনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪ দশমিক ৭৬। ২০১৬ সালে সেটি বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ১৫। এছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমানোর ক্ষেত্রে ২০১০ সালে অবস্থান ছিল ৯ দশমিক ৯৫ এবং ২০১৬ সালে অগ্রগতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৮ এ। মানসম্মত নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ২০১০ সালে অবস্থান ছিল ২২ দশমিক শূন্য এক এবং ২০১৬ সালে বেড়ে হয়েছে ২২ দশমিক ১২। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে।