প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
উন্নয়নের যতগুলো প্যারামিটার আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে সুশাসন। একটি দেশ পরিচালনা থেকে শুরু করে অর্থনীতির যতগুলো খাত আছে সেখানে যদি সুশাসন না থাকে তাহলে উন্নয়নকে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই করা সম্ভব নয়। দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ ব্যাংক খাতে গত কয়েক বছরে একের পর এক বড় ধরনের জালিয়াতি ঘটে গেছে। দেশে বেশ কিছু ব্যাংক বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাণিজিক ব্যাংক যেগুলো আছে, সেগুলোতে খেলাপি ঋণের মাত্রা সর্বকালের রেকর্ড অবস্থানে রয়েছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত একটি তথ্যে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, সেখানে ২২-২৩ হাজার কোটি টাকার যে খলাপি ঋণ ছিল সেটির মাত্রা এখন সোয়া লাখ কোটি টাকায় এসেছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান আহমদ আল কবীর এবং অর্থনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
আহমদ আল কবীর বলেন, কোনো অর্থনীতিতে তার সব দিক ভালো থাকবে এমনটি আশা করা ভুল। তবে দেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা ভালো। কারণ কয়েক বছর ধরে এর প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ছয় শতাংশের ওপরে আছে। দেশের উন্নয়নের সার্বিক সূচকগুলো (ইনডিকেটর) ইতিবাচক, কিন্তু আমাদের একটি বিষয়েই সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা, সেটি হচ্ছে ব্যবস্থাপনা। দেশের সব জায়গাতেই ব্যবস্থাপনার অনেক অভাব রয়েছে। আর এখানে আমাদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে এবং এ ব্যাপারে দেশের যুবসমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান বাজারের যে আকার সে অনুসারে সূচকের পয়েন্ট ছয় হাজার থাকাটি ঠিক আছে। তবে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই নতুন শেয়ার বাজারে আনতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকগুলো কেন বাজারে আসে নাÑএ কারণগুলো সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। আর নতুন ভালো শেয়ার পুঁজিবাজারে বৃদ্ধি পেলে বাজার স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সম্প্রসারিত হবে।
মিজানুর রহমান বলেন, উন্নয়নের যতগুলো প্যারামিটার আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে সুশাসন। একটি দেশ পরিচালনা থেকে শুরু করে অর্থনীতির যতগুলো খাত আছে, সেখানে যদি সুশাসন না থাকে তাহলে আমরা যে উন্নয়নের কথা বলে যাচ্ছি সেটাকে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই করা সম্ভব নয়। যেমন দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ ব্যাংক খাতে গত কয়েক বছরে একের পর বড় ধরনের জালিয়াতি ঘটে গেছে। লক্ষ করলে দেখবেন, দেশে বেশ কিছু ব্যাংক বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাণিজিক ব্যাংক যেগুলো আছে সেগুলোতে খেলাপি ঋণের মাত্রা সর্বকালের রেকর্ড অবস্থানে রয়েছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত একটি তথ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে সেখানে ২২-২৩ হাজার কোটি টাকার যে খেলাপি ঋণ ছিল সেটির মাত্রা এখন সোয়া লাখ কোটি টাকায় এসেছে। এর মধ্যে ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণকে তারা রাইট অফ করেছে। একইসঙ্গে ঋণগুলোকে পুনঃতফসিলীকরণ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পুনঃতপসিলীকরণ হচ্ছে এক ধরনের জালিয়াতি। এছাড়া পুঁজিবাজারেও বেশ কিছু অনিয়ম আছে। পুঁজিবাজারে কিছুটা ওঠা-নামার প্রবণতা থাকবেই। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর যে অযাচিত প্রভাব সেটাই আসলে চিন্তার। ফলে আমি মনে করি না বাজার সব সময় স্বাভাবিক গতিতে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির যে আকার ও জিডিপির যে ভলিউম তার সাপেক্ষে পুঁজিবাজারের মোট লেনদেনের পরিমাণ অনেক কম। সম্প্রতিককালে যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, সেটাকে খুব একটি খারাপ হিসেবে দেখি না। এখানে একটি ভালো জিনিস রাখা হয়েছেÑঋণ আদায়ের মাধ্যমে অথবা আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে সমন্বয় করার একটি বিধান এখানে আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, গত দু’দিনে সূচকের কেন ১৩৫ পয়েন্ট পতন হলো? গত চার দিনে ১৭৬ পয়েন্টের মতো পতন হয়েছে এবং এটি হওয়ার কোনো কথা ছিল না। তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট এবং মানি মার্কেটের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে একটি সমন্বয়ের দরকার। ব্যাংকগুলো এই মুহূর্তে কিছুটা তারল্য সংকটে আছে।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম