প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর অনেক ধরনের প্রবিধান প্রণীত হয়েছে বাজার ভালো করার জন্য। সবার প্রত্যাশা ছিল বাজার সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি সুশাসন আসবে বাজারে। কিন্তু তা হয়নি। দেশে ব্যবসা আছে। অনেক ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনা যেত যদি সুশাসন থাকত। পুঁজিবাজারে অনেক ধরনের সংশোধন এসেছে; তারপরও বাজারের প্রতি মানুষের সামগ্রিক আস্থার ঘাটতি রয়েই গেছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী ও সুপারস্টার গ্রুপের সিএফও মো. শফীকুল আলম, এফসিএমএ।
এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সামনে মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়ার একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। খুব শিগগিরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এমন একটি ঘোষণা আসবে বলে আমরা আশা করছি। ইতোমধ্যে আমরা প্রাথমিক ধাপ উত্তীর্ণ হয়েছি। আর এমন একটি ভালো খবর যখন দেশের জন্য আসতে চলেছে, তখন ব্যাংকে টাকা নেই। ব্যাংক খাতে এখন তারল্য সংকট চলছে। এ খাতে যে অনাচারগুলো হয়েছে, এখন তার ফল দেখা যাচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন, দেশের পুঁজিবাজারে গড়ে প্রতিদিন ২০০-৩০০ কোটি টাকার মতো লেনদেন হচ্ছে এবং এটি স্বাভাবিক নয়। দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ কিন্তু ২০০-৩০০ কোটি টাকার মার্কেট নয়। আমাদের পুঁজিবাজারের যে আকার ও অংশগ্রহণ, সে হিসেবে অন্তত হাজার কোটি টাকার ওপরে স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন লেনদেন হওয়া উচিত ছিল। ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারীরা আবার বাজারে এসেছিলেন; কিন্তু সেখান থেকে কেন তারা আবার ফিরে গেলেন? কথা হচ্ছে, পুঁজিবাজার যদি সঠিকভাবে না চলে, মানি মার্কেটে যদি টাকা না থাকে, তাহলে বাজারে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়। আর তারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি পুঁজিবাজারে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ সুবিধা পাওয়ার জন্য দাবি করে আসছিলেন এবং অনেকটা সিঙ্গেল ডিজিটে চলেও এসেছিল। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার কারণে আবার তা ডাবল ডিজিটে চলে গেছে। ব্যাংক খাতে নন-পারফরমিং লোন বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রচুর অর্থ পাচার হয়ে গেছে। ব্যাংকের টাকা কারা লুট করেছে? ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাই এ টাকাগুলো লুট করছে। এছাড়া নির্বাচনী বছর হিসেবেও একটি প্রবণতা আছে। কিছু মানুষ তাদের অবৈধ আয় গোপন করার জন্য টাকা বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে আর এ কথাগুলো বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অনেক এসেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মানি মার্কেটে টাকা নেই, ক্যাপিটাল মার্কেট ঠিকভাবে চলে না, তাহলে কীভাবে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে যাব! লক্ষ করলে দেখবেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল দুই চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স ও পোশাক খাতে যেমন প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল, তেমনটি হয়নি।
মো. শফীকুল আলম বলেন, ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর অনেক ধরনের প্রবিধান এসেছে বাজারে। আমরা আশা করেছিলাম, বাজার সম্প্রসারণের জন্য সুশাসন আসবে বাজারে। কিন্তু তা হয়নি। দেশে ব্যবসা আছে। অনেক ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনা যেত যদি আমাদের সুশাসন থাকত। পুঁজিবাজারে অনেক ধরনের সংশোধন এসেছে; তারপরও বাজারের প্রতি মানুষের সামগ্রিক আস্থার ঘাটতি রয়েই গেছে। নতুন আইপিও আনার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার যদি অকর্ষণীয় হতো, তাহলে কিন্তু ব্যাংক খাতের ওপর এককভাবে চাপ থাকত না। পৃথিবীর কোথাও নেই যে, ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু ব্যাংক খাতকেই ব্যবহার করা হয়। কাজেই বাজারে ভালো ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো আনার ক্ষেত্রে আমাদের আরও তৎপর হওয়া দরকার বলে মনে করি।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম