সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাজেট ব্যবস্থাপনায় আমূল সংস্কার প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে সরকার যে বাজেট প্রণয়ন করছে, তা নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা এক গতানুগতিক কাজে পরিণত হয়েছে। যাদের ভোটাভুটিতে বাজেট অনুমোদন লাভ করে, সেই সংসদ সদস্যদের বাজেট প্রণয়নে কোনো ভূমিকা নেই। তাছাড়া সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে গণ্য দেশের জনগণের বাজেট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। ফলে সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন বাজেটে তেমন দেখা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে বাজেটের কাঠামোগত সংস্কার সাধন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

রাজধানীর ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে গতকাল সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। ‘জাতীয় বাজেট ও অর্থনৈতিক গতিধারা’ শীর্ষক এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক তিতুমীর উল্লেখ করেন, বর্তমানে মৌলিক তথ্য-উপাত্তগুলো অনেক পুরোনো। ২০১৬ সালের পর আর কোনো খানা আয়-ব্যয় জরিপ হয়নি। এছাড়া ২০১৭ সালের পর কোনো শ্রমশক্তি জরিপ হয়নি। তাহলে সরকারে কিসের ভিত্তিতে বাজেট প্রক্ষেপণ নির্ধারণ করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তাছাড়া বাজেটে আদর্শ কর ব্যবস্থা হওয়া উচিত প্রত্যক্ষ কর। কিন্তু সে কর আদায় জোরদার করার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকারের পরিচালন ব্যয় হুঁ হুঁ করে বাড়ছে। এর তুলনায় উন্নয়ন ব্যয় কম। অথচ ১৯৭২ সালে দেশের প্রথম বাজেটে প্রায় ৭০ শতাংশ ছিল উন্নয়ন ব্যয়। এখন বিষয়টি ঠিক এর উল্টো। তাছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয়ে এমন অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা সেখানে থাকার কথা নয়। এসব বিষয় সমাধানে বাজেট কাঠামোতে আমূল সংস্কার আনা প্রয়োজন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে একটি অনির্বাচিত সরকার দেশ চালাচ্ছে। আর একটি অনির্বাচিত ও অপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার যখন বাজেট দেয়, তখন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট সুযোগ থেকে যায়। দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থার নানা ত্রুটির বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নানা পরিমাপে দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়ছে। এর প্রধান কারণ সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ। সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য একটি গোষ্ঠী সৃষ্টি করে তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে থাকায় বাজেটে পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি পুরো বাজেট ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সাধারণ মানুষ এত জটিল বিষয় নিয়ে ভাবতে ইচ্ছুক নয়। তাদের প্রধান চাওয়া হচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করা। সাধারণ মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে, দুর্গম এলাকায় রাস্তা-ঘাট করেছে। সরকারের গত তিন মেয়াদে সরকার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে, যা মানুষের জীবনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। কাজেই আমাদের এসব তাত্ত্বিক আলোচনা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, বর্তমানে রাজনীতি অর্থনীতিকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। সরকারের ঘোষিত বাজেটের সঙ্গে এসআরও দিয়ে ঘোষিত নির্দেশনা সঙ্গতিপূর্ণ হচ্ছে না। ফলে বাজেট বাস্তবভিত্তিক হচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশ নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। এটি আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। অথচ এসব অবকাঠামো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় জনবল তৈরি করতে পারিনি। যে কারণে পদ্মা সেতুন নিজেদের অর্থে তৈরি হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব দিতে হচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আহসানুল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, সরকার দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষকে আস্থায় নিতে পারেনি। যে কারণে প্রত্যক্ষ কর আহরণ বাড়ছে না। দেশের নাগরিকরা কর দিতে চান। কিন্তু কর পরিশোধের ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল। যে করেণ তারা কর অফিসে যেতে চান না। অন্যদিকে যারা কর দেন না, তারা বহাল তবিয়তে আরও ভালো থাকতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে কর কাঠামোতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। তাছাড়া সরকার ব্যবসায়ীদের নানা সময় সরাসরি চোর আখ্যা দিয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সরদার এ নাইম, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসী, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবু মোতালেব, বারভিডার সাবেক সভাপতি আব্দুল হক, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিওর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আওয়াল, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ ও আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য লিয়াকত আলী ভূইয়া।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০