Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:53 pm

সুশিক্ষিত বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আসছেন

আগে বাজার সম্পর্কে কোনো সংবাদ শুনলেই বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ারে হুমড়ি খেয়ে বিনিয়োগ করত। সংবাদটি সঠিক না ভুল সেটি বিবেচনা করত না। তাই সে সময়ে বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বাজার সম্পর্কে সচেতন। তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নেন। দেশ ও বিদেশের অর্থনীতি, পুঁজিবাজার এবং রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা দিন দিন পুঁজিবাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ হয়ে উঠছে। এতে করে সুশিক্ষিত অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে আসছে। যা শুভ লক্ষণ। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজারের টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট সাইফ ইসলাম দিলাল।
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ২০১০ সালের ধসের পর পুঁজিবাজারের অনেক উন্নয়ন হয়েছে এবং এর সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও সচেতন হয়েছে। আগে যেটা হতো বাজার সম্পর্কে কোনো সংবাদ শুনলে বিনিয়োগকারীরা তাতে প্রভাবিত হয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতো। সে সংবাদ সঠিক না ভুল সেটি বিবেচনা করত না। ওই সময়ে বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বাজার সম্পর্কে সচেতন। তারা বাজার সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নেন। দেশ ও বিদেশের অর্থনীতি, পুঁজিবাজার এবং রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা দিন দিন পুঁজিবাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ হয়ে উঠছে। এতে করে সুশিক্ষিত অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে আসছে।
আবদুর রহিম হারমাছি বলেন, বছরের শুরুতে পুঁজিবাজার ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ নতুন বছর, নতুন সরকার, সরকারের ইশতেহারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ডিমিউচুয়ালাইজেশন এবং চীনের দুটি বিখ্যাত স্টক একচেঞ্জ দেশের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচনের পর বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আসতে শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার উন্নয়নে আশার আলো দেখতে পাবে বলে মনে করি।
২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসে অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ক্ষতি এখনও অনেক বিনিয়োগকারী কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানসহ আরও যেসব নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে সবাই এক জায়গায় বসে সম্মিলিতভাবে নতুন বছরে কীভাবে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করা যায় সেটির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাতে করে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার থেকে স্বাভাবিক মুনাফা লাভ করতে পারে। পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম ওঠা নামা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে দর বাড়া কমা করলে সেদিকে বিএসইসিকে কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। যাতে করে শেয়ারের দাম কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে বা কমতে না পারে।
সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, বছরের শুরুতে পুঁজিবাজারের সব সূচক ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। এর বেশকিছু কারণ রয়েছে। নতুন সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন। বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আশাবাদ। যিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিচ্ছেন পুঁজিবাজার সম্পর্কে তার ধারণা রয়েছে ও যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবেন বলে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, দেশে অনেক সরকারি-বেসরকারি এবং বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে। ওই সব কোম্পানি দেশে ভালো ব্যবসা করছে এবং মুনাফাও ভালো। এখন কথা হচ্ছে যে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে যে অবস্থানে রয়েছে তাতে করে যদি আরও সরকারি, বেসরকারি, বহুজাতিক কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং ভালো বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়, তাহলে পুঁজিবাজার অনেক ভালো হবে এবং নতুন বিনিয়োগ আসবে। কারণ দেশের জনগণের কাছে টাকার অভাব নেই। আবার দেশে অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে। এখানে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। ওই সব উদ্যোক্তারা যদি ব্যাংক থেকে টাকা না নিয়ে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে তাহলে পুঁজিবাজার সম্প্রসারিত হবে এবং বাজার মূলধন বাড়বে।
তিনি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, বুঝে শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিশেষ করে স্বল্পমূলধনি ও যেসব কোম্পানির উৎপাদন নেই, ওই সব কোম্পানির ফাঁদে যাতে বিনিয়োগকারীরা না পড়ে। কারণ ওই সব কোম্পানি নিয়ে এক ধরনের খেলা চলে যা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারে না। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাজারে ভালো মানের অনেক কোম্পানি রয়েছে যদি বিনিয়োগকারীরা বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করতে পারে সেক্ষেত্রে ক্ষতির চেয়ে লাভের সম্ভাবনা বেশি।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ