নিজস্ব প্রতিবেদক: সুকুকের মতো আরও বন্ড ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সুবিধা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। গতকাল ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা যেন ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে আরও বেশি হারে ঋণ সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া সিএমএসএমই খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিতে বাংলাদেশের ব্যাংকের নজরদারি বাড়াতে গুরুত্বারোপ তিনি। সেই সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হয়রানি হ্রাস ও স্বচ্ছতা বাড়াতে দেশের কর ও ভ্যাট কার্যক্রমের সব স্তরে অটোসেশন নিশ্চিতকরণের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘কভিড মহামারি ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি সবার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে; যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু নীতি সহায়তার পাশাপাশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কভিড মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরোপের কারণে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা পরিলক্ষিত হলেও দেশের অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আশা করি সুসুক বন্ড প্রবর্তনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা যাবে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিবর্তিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেবে।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারি ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি সব স্তরের জনগণের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এসব মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু নীতি সহায়তার পাশাপাশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, কভিড মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরোপের কারণে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে কিছুটা স্থবিরতা ছিল। তবে আমাদের অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি অধিক মাত্রায় তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। তবে কৃষি, ওষুধ, পাট, সিরামিক, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি সম্ভাবনাময় খাতকে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দিতে হবে। একইসঙ্গে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে সবাইকে মনোযোগী হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়তা নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিডার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার আরও উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে দেশের কর কাঠামোকে সাময়িক সময়ের জন্য পুনর্বিন্যাস করতে হবে। তা না হলে সামনের রমজান মাসে আরও ভোগান্তি বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষা ও শিল্প খাতের সমন্বয় আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। আমাদের শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা চাকরি পাচ্ছে না। অথচ আমরা ১৫-১৬ হাজার টাকার নিচে গাড়ির চালক খুঁজে পাই না।’
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে কৃষিপণ্য প্যাকেজিং এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় আরও মনোযোগী হতে হবে। এ ছাড়া এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের ওষুধশিল্পকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। টেকসই পণ্য হিসেবে পাট থেকে উৎপাদিত পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে এ ধরনের পণ্য রপ্তানি আরও বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, বিদ্যুৎ খাতে সরকারি পুরোনো শিল্পসমূহ যেগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না, সেগুলোকে বন্ধ করার পাশাপাশি সিস্টেম লস কমাতে হবে। যার মাধ্যমে বিদ্যুতের মূল্য ভোক্তাদের সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে।