Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 8:52 pm

সুস্থ জীবনের জন্যই নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা জরুরি

সৃষ্টিলোকের সেই আদিপ্রাণ বৃক্ষ পৃথিবীকে যুগ যুগ ধরে রক্ষা করেছে ধ্বংসের হাত থেকে। মানুষের ক্ষুধায় জুগিয়েছে ফলমূল, আশ্রয়ে দিয়েছে ছায়াÑবিশ্বব্যাপী সুবিস্তৃত বনানীজুড়ে এই আদিপ্রাণ বিকশিত হয়েছে।

গাছ আমাদের কোনো ক্ষতি না করে সর্বক্ষেত্রে উপকার করে গেলেও আমরাই গাছের সঙ্গে সবচেয়ে নিষ্ঠুর আচরণ করেছি, নগরায়ণের নামে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাতে সবার আগে হত্যা করেছি গাছকে। যেন পরিকল্পনা করে নগর থেকে গাছকে আলাদা করেছি। কারণে অকারণে হত্যা করেছি গাছ। আগের চেয়ে বর্তমানে যেন গাছ কাটার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। কয়েক দশক ধরে নির্বিচারে বনাঞ্চল কেটে উজাড় করা হচ্ছে।

কিছু টাকার লোভ আর কেবল অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে পার্কে, উদ্যানে, রাস্তার পাশের ছায়াদাতা সবুজ গাছগুলোকে নির্দ্বিধায় হত্যা করছি আমরা। একবারও ভাবছি না গাছ আমাদের জন্য কতটা উপকারী। যানবাহন, কলকারখানা, মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত করছে। গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে আর অক্সিজেন ত্যাগ করে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এতে পরিবেশ সুস্থ ও নির্মল রাখে। আর এ অক্সিজেন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুবই জরুরি। কার্বন ডাই-অক্সাইডের কারণে পরিবেশ উষ্ণ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ফলে অসময়ে অনাবৃষ্টি, খরা, অতিবৃষ্টি, প্রচণ্ড দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দুর্যোগ ঘটে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একমাত্র বৃক্ষই প্রাকৃতিক পরিবেশ সুস্থ ও নির্মল রাখতে পারে। বাতাসে শ্বাস নিতে না পারলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে আমরা বাঁচি। মানুষ নিঃশ্বাসের সঙ্গে বিষাক্ত গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছাড়ে। অন্যদিকে গাছপালা বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ও বাতাসে অক্সিজেন ছাড়ে। গাছপালা না থাকলে একসময় বাতাসের অক্সিজেন একেবারে শেষ হয়ে যেত, আর মানুষসহ প্রাণিকুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তাম। কাজেই গাছপালা আমাদের জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি অত্যন্ত কম। তদুপরি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বনভূমি কর্তনের মাত্রাও ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য কোনো দেশের মোট ভূমির অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা উচিত। ১৯৪৭ সালে দেশের আয়তনের ২৪ শতাংশ বনভূমি ছিল। ১৯৮০-৮১ সালে তা কমে হয় ১৭.২২ শতাংশ এবং বর্তমানে মাত্র ১৭.০৮ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। আশঙ্কাজনক ঘাটতির কারণে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিবিধ প্রয়োজন মেটানো। এর মধ্যে কৃষি জমির সম্প্রসারণ, বসতবাড়ি স্থাপন, শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার, গৃহনির্মাণ সামগ্রী ও আসবাবপত্রের ও ব্যবহার, রাস্তা, বাঁধসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার, নগরায়ণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। উল্লিখিত কারণগুলোর মধ্যে জ্বালানি হিসেবে বনসম্পদের ব্যবহার ৯৫ শতাংশ দায়ভার বহন করে। এ ছাড়া বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃক্ষের ব্যাপক ক্ষতি করে। অদূর ভবিষ্যতে সাধারণ প্রয়োজনে বৃক্ষ সংকট প্রকট হয়ে দাঁড়াবে। তাই সুস্থ জীবন ও সুস্থ পরিবেশের জন্য বৃক্ষ নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ করতে হবে সবাইকে।

ইমরান হোসাইন

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়