বাল্যবিয়ের প্রবণতা শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেশি। গ্রামাঞ্চলে মেয়েরা রজঃশীলা হওয়ার আগেই তাদের অনেককেই বিয়ে দেয়া হয়। যাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। অভিভাবকরা রজঃশীলা মেয়েকে ঘরে রাখতে ভয় পান; বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতার জন্য। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকার বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন প্রবর্তনসহ মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে, যেন মেয়েরা লেখাপড়া করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাল্যবিয়ের হার কার্যকরভাবে কমছে না। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, করোনাকালে বাল্যবিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। পরিবারের সম্মান রক্ষার ক্ষেত্রে নারীরা সাধারণত বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। একজন মেয়েশিশু যখন যৌবনপ্রাপ্ত হয়, তাদের পিতা-মাতা তখন তাদের সতীত্ব রক্ষার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। বাল্যবিবাহ রোধ করার ক্ষেত্রে এটি হলো মূল বাধা। কারণ, সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, যেসব পিতামাতা মেয়ে শিশুদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়, তারা মেয়েশিশুর বয়ঃসন্ধির শুরুতে যৌন নির্যাতনের ভয় অনুভব করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাল্যবিয়ে হলে অসুবিধা কোথায়?
চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একজন মেয়ের শারীরিক ও মানসিক পরিপূর্ণতা আসে ১৮ বছর বয়সে। তার আগে শারীরিক ও মানসিক পরিপক্বতা ও সন্তান ধারণের দৈহিক সক্ষমতা গড়ে ওঠে না। অল্প বয়সে মা হওয়ার কারণে তারা বিভিন্ন ধরনের রোগে ভোগে, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। এমনকি যে সন্তান জন্ম দিচ্ছে সে সন্তানও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে জন্মগ্রহণ করে। অপ্রাপ্তবয়স্ক মা প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদান করতে পারে। বাল্যবিবাহের ফলে বিবাহবিচ্ছেদের আশঙ্কা তৈরি হওয়া ছাড়াও নানা পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়। বাল্যবিবাহ শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি করে না, পারিবারিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনেও সহায়ক হয়। যেমনÑশিক্ষার আলো এবং স্বাস্থ্যগত কারণে অল্প বয়সের মেয়েটি তার নিজের সম্পর্কে সচেতন নয়, সুতরাং পরিবার সম্পর্কে তার ধারণা না থাকায় স্বাভাবিক বিষয়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় মারা যাচ্ছে একজন নবজাতক। নবজাতক বেঁচে থাকলেও অনেক সময় তাকে নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। তাই ভবিষ্যতের সুস্থ জাতির জন্য বাল্যবিয়ের প্রবণতা ঠেকানো জরুরি। না হলে ভবিষ্যতে জাতির বিরাট একটি অংশ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।
ইমরান হোসাইন
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়