শরীরচর্চা হলো এক ধরনের শারীরিক কার্যক্রম, যা শারীরিক সুস্থতা রক্ষা বা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যার অপর একটি অর্থ হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত আন্দোলন। অন্যভাবে বলতে গেলে শরীরচর্চা হলো একটি পৌরাণিক অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক পরীক্ষা পদ্ধতি, যা মানুষের শারীরিক অবস্থা, স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের সাধারণ বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
মেয়েদের শারীরিক অবস্থা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং কার্যক্ষমতা সুস্থ ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত শরীরচর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে মেয়েদের শরীর সুস্থ সবল ও ভালো থাকে। এর মাধ্যমে শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে আমাদের ব্রেন সতেজ থাকে। ব্রেন সতেজ থাকায় আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা মেয়েদের মানসিক অবসাদগ্রস্ততা দূর করতে, ইতিবাচক আত্মসম্মান বৃদ্ধিতে, সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় এবং শরীরের সঠিক অনুপাত অর্জনে শারীরিক ব্যায়াম বা শরীরচর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উচ্চ কার্যক্ষমতা ও প্রতিস্থাপন ক্ষমতা উন্নত করতেও শরীরচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম।
তবে শরীরচর্চা শুরু করার আগে মেয়ে বা মহিলাদের বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। একটা বয়সের পর মেয়েদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে শুরু করে। যার ফলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ সকলেই শরীরচর্চার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে কী ধরনের ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করবেন তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে কার কাছে প্রশিক্ষণ নেবেন। কারণ শরীরচর্চা করতে গিয়ে হরহামেশাই অনেকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। দেখা যায় জিম বা ব্যায়ামাগারে ভারী ব্যায়াম করতে গিয়ে শরীরের ঘাম, কোমর, পা এবং হাঁটুতে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। তবে বর্তমানে শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও অনেক পুরুষ ও মহিলা গাইড হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বর্তমান সময়ে মেয়েদের আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শরীরচর্চার পাশাপাশি তায়কোয়ান্দো, বক্সিং এবং কারাতের মতো অনেক ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে করে মেয়েদের শারীরিক বিকাশ দ্রুত হয় এবং ভয়-ভীতি ও জড়তা দূরীকরণের মাধ্যমে আত্মরক্ষায় মেয়েরা সচেষ্ট হতে পারে।
ছেলেমেয়ে, সুস্থ-অসুস্থ সকলের জন্যই শরীরচর্চা অত্যন্ত উপকারী। শরীরচর্চা করার সময় মেয়েদের হ্যাপি হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি স্ট্রেস বাস্টার হিসেবে কাজ করে থাকে। এছাড়া হতাশা এবং উদ্বেগ কমায়। আর দ্রুত মেয়েদের ওজন কমাতে শরীরচর্চার চেয়ে বিকল্প কার্যকর পদ্ধতি নেই বললেই চলে। তাছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে মেয়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন হƒদরোগ, সংবহন তন্ত্রের জটিলতা, টাইপ ২ ডায়বেটিস এবং স্থূলতা রোধে এবং পুনরুদ্ধারে শরীরচর্চা সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। খেলাধুলা বা শরীরচর্চা ছেলেমেয়ে উভয়কেই নেশা থেকে বিরত রাখে। প্রতিনিয়ত নিয়মানুবর্তিতা মেনে শরীরচর্চা করলে আমরা পরিশ্রমী হয়ে উঠতে পারি। এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা করার মাধ্যমে মেয়েদের ভয়, জড়তা দূর হয়ে যায়। যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা শরীরচর্চা বা ব্যায়ামকে অলৌকিক এবং আশ্চর্যজনক ওষুধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ ও সতেজ থাকলে আমাদের দৈনন্দিন জীবন উপভোগ্য এবং আনন্দমুখর হয়। মেয়েদের শারীরিক গঠন সুগঠিত ও মজবুত করতে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে ও লম্বা হতে মনোযোগ, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্যশক্তি বৃদ্ধি করতে, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, শারীরিক অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া নিয়মমাফিক শরীরচর্চায় হƒৎপিণ্ড, ফুসফুস, পরিপাকতন্ত্র, রক্তনালি, পেশি ও হাড় সুস্থ থাকে। তাই আসুন নিয়মিত শরীরচর্চা করি, সুস্থ সুন্দর জীবন উপভোগ করি।
জান্নাতুল ফেরদৌস তানজিনা
প্রশিক্ষক, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মার্শাল আর্ট সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন