নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধে সাড়া দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির নেত্রী অং সান সু চির ‘ফ্রিডম অব দ্যা সিটি অব অক্সফোর্ড অ্যাওয়ার্ড’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেছে শহর কর্তৃপক্ষ।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সোমবার অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিলের ভোটাভুটিতে সু চির সম্মাননা প্রত্যাহারের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। মিয়ানমারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৭ সালে তাকে ওই সম্মাননা দিয়েছিল যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিল।
সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সহিংসতা দেখেও যারা চোখ বন্ধ রাখে, তাদের জন্য কোনো উদ্যাপনের আয়োজনে থাকবে না অক্সফোর্ডে। এর আগে গত অক্টোবরে অক্সফোর্ডের কাউন্সিলররা ভোটাভুটির মাধ্যমে সু চির সম্মাননা প্রত্যাহারের প্রশ্নে আলোচনায় সম্মত হন। গত সোমবার চূড়ান্ত ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রস্তাবটি পাস করা হয়।
সু চিকে দেওয়া ‘ফ্রিডম অব দি সিটি অব অক্সফোর্ড অ্যাওয়ার্ড’ প্রত্যাহারের প্রস্তাব অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিলে তুলেছিলেন কাউন্সিলর মেরি ক্লারকসন। ভোটাভুটির পর তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য সুবিচার আর অধিকারের দাবিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আজ আমাদের কণ্ঠও মিলিত হলো।’
এদিকে অক্সফোর্ডে যখন এ ভোটাভুটি চলছে, সেই একই দিনে মিয়ানমার সফররত পোপ ফ্রান্সিসের কাছে দেশটির সেনাপ্রধান দাবি করেছেন, ‘তার দেশে কোনো ধর্মীয় বৈষম্য নেই।’
আর গত আগস্টের শেষভাগে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান। এ অভিযানে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ চলছে বলে অভিযোগ করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। জাতিসংঘও একে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের চেষ্টা হিসেবে দেখছে।
অথচ দেশটির সেনাবাহিনীর মতো সু চির দলও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে রাজি নয়। রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচিত হতে হচ্ছে সু চিকে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বড় জয় পেয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করায় মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। তবে স্টেট কাউন্সেলর পদ সৃষ্টি করে কার্যত সু চির হাতেই সরকারপ্রধানের মূল ক্ষমতা রাখা হয়েছে।
১৯৬৭ সালে অক্সফোর্ডের সেন্ট হিউজ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন তখনকার তরুণ সু চি। তার স্বামী ড. মাইকেল অ্যারিস একসময় ওই কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন। গণতন্ত্রের দাবিতে অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া সু চি ২০১০ সালে গৃহবন্দি দশা থেকে মুক্তি পান। গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৯৩ সালে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দিয়েছিল অক্সফোর্ড, ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়ার পর ওই ডিগ্রি তিনি গ্রহণ করেন। অক্সফোর্ড ছাড়াও গ্লাসগো, বাথ, ক্যামব্রিজসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গত ৩০ বছরে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের প্রতীক সু চিকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেয়। পাশাপাশি কয়েকটি শহর ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তাকে সম্মাননা দেওয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সু চিকে দেওয়া সম্মাননা গত সেপ্টেম্বরে স্থগিত করে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিসন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্ট হিউ কলেজ থেকে সু চির প্রতিকৃতি সরিয়ে নেওয়া হয়। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস স্টুডেন্টস ইউনিয়ন সু চিকে দেওয়া সম্মানসূচক প্রেসিডেন্ট পদ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়।