সূচকের পতন নিয়ে সপ্তাহ শুরু, ‘দুর্বল শেয়ারের’ উত্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন কর্মদিবস সূচক বৃদ্ধির স্বস্তি নিয়ে আগের সপ্তাহ শেষ করলেও পুঁজিবাজারে নতুন সপ্তাহ শুরু হলো সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেন। দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তুলনায় দর কমেছে, এমন কোম্পানির সংখ্যাও বেশি।

বৃহস্পতিবারের মতোই রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দর বৃদ্ধির শীর্ষে দুর্বল মৌলভিত্তির ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানির প্রাধান্য দেখা গেছে। কোনোটি পাঁচ বছর, কোনোটি আট বছর ধরে লভ্যাংশ দেয় না। এমন কোম্পানিও আছে যেগুলো ১০ টাকার শেয়ারে তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত পাঁচ টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে।
সকালে উত্থান দিয়ে শুরু হওয়া ডিএসই প্রধান সূচক একাধিকবার বড় ধরনের ব্যবধানে ওঠানামা করে।
কিন্তু শেষ বেলার বিক্রয় চাপে আগের দিনের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট হারিয়েছে। আগের দিন সূচক লেনদেন শেষ করে পাঁচ হাজার ৭৩৩ পয়েন্টে। সকাল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিও কম ছিল। লেনদেন কমে আসার জন্য এটিও দায়ী মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

দিন শেষে লেনদেন হয় ৬৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৬৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা কম। খাতওয়ারি লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ অবদান রাখে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ব্যাংক খাত দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে অবদান রেখেছে ১৩ শতাংশ আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অবদান ছিল ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ। মোট ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর হারায় ১৮২টির, দর বাড়ে ১৫৯টির এবং আগের দরে লেনদেন শেষ করেছে ৪৬টি কোম্পানি। ডিএসই শরিয়া সূচক ১ পয়েন্ট এবং ডিএস৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমেছে।

শীর্ষ দশে যেসব কোম্পানি: সার্কিট ব্রেকার ১০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া এসকে ট্রিমস গত তিন বছরে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দিয়েছে পাঁচ শতাংশ। গত চার বছরেও শেয়ারপ্রতি এক টাকা মুনাফা করতে না পারা দেশ গার্মেন্টসের দরও বেড়েছে কাছাকাছি। টানা দুই বছর লোকসান দেয়ার পর এবার মুনাফার মুখ দেখা ওয়াইমেক্স ইলেকট্রোড, বছর দুয়েক আগে অস্বাভাবিক উত্থানে ৪০ টাকা থেকে শেয়ারদর ৩২০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর ফের ৪০ টাকার ঘরে নেমে আসা সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, একইভাবে ২৮ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ টাকা ছুঁয়ে ফেলার পর ফের ৩০ টাকার নিচে নেমে আসা দুর্বল মৌলভিত্তির এমারাল্ড অয়েল এবং তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ারপ্রতি প্রায় ছয় টাকা লোকসান দেয়া এইচআর টেক্সটাইলসের দরও বেড়েছে সার্কিট ব্রেকারের কাছাকাছি।

সবশেষ ২০১৬ সালে লভ্যাংশ দেয়ার পর গোপনে কোম্পানি বিক্রি করে দেয়া মিথুন নিটিং, সবশেষ ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়া সেন্ট্রাল ফার্মা এবং স্বল্প মূলধনি ওরিয়ন ইনফিউশন এবং সোনালী পেপার ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে। কেবল শীর্ষ ১০ নয়, দর বৃদ্ধির শীর্ষ ২০ বা ৩০টি কোম্পানির বেশিরভাগেই এমন দুর্বল মৌলভিত্তির বা স্বল্প মূলধনি কোম্পানির প্রাধান্য দেখা গেছে। তবে দুর্বল এসব কোম্পানি সূচক ওঠানামায় খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ দর বৃদ্ধির কারণে সূচকে সবচেয়ে বেশি ৯ পয়েন্ট যোগ করেছে গ্রামীণফোন। ইসলামী ব্যাংক, ওয়ালটন, বেক্সিমকো সুকুক বন্ড, খান ব্রাদার্স অ্যান্ড পিপি ওভেন কোম্পানি, ওরিয়ন ইনফিউশন, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লিনডে বিডি, সি পার্ল ও ব্যাংক এশিয়া সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট যোগ করেছে সূচকে।

পতনের শীর্ষে যারা: দর হারানোর শীর্ষে ছিল ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। ইউনিটপ্রতি শেয়ারদর কমেছে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। পৌনে ৯ শতাংশ দর হারিয়েছে ন্যাশনাল টি কোম্পানি। এই কোম্পানিটি গত কয়েক দিনে দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে স্থান নিয়েছিল। তৃতীয় অবস্থানে ছিল ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া কোম্পানি ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ দর হারিয়েছে। স্বল্প মূলধনি এমবি ফার্মা, কোহিনুর কেমিক্যালস, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ও সিএপিএমবিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড ছিল দর পতনের শীর্ষ দশে।

তবে সূচক পতনের সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী কোম্পানি ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো; ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ দর হারানোয় সূচক কমেছে ১১ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট।
রেনাটা, ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, কোহিনুর কেমিক্যালস, রবি, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট ও সিটি ব্যাংকও সূচক পতনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০