নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহজুড়ে সূচকের মিশ্র প্রবণতায় লেনদেন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিন সূচক ইতিবাচক ছিল। দুদিন কমেছে। তবে দুদিনে বড় পতন হওয়াতে ডিএসইএক্স ও ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক নেতিবাচক অবস্থানে চলে যায়। ইতিবাচক ছিল ডিএস৩০ সূচক। ডিএসইর মোট লেনদেন ও দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ হারে। গত সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবস লেনদেন হয়। আগের সপ্তাহেও পাঁচ কার্যদিবস লেনদেন হয়। বাজার মূলধন কমেছে এক দশমিক ৩২ শতাংশ। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একই চিত্র দেখা গেছে।
সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৭ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বা এক দশমিক ১৩ শতাংশ কমে চার হাজার ১৪৯ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে স্থির হয়। ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক পাঁচ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৯ শতাংশ কমে ৯৪০ দশমিক ২৯ পয়েন্টে পৌঁছায়। ডিএস৩০ সূচক দশমিক ২২ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য দুই শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৪০৬ দশমিক ৬০ পয়েন্টে স্থির হয়। মোট ৩৬০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬০টির, কমেছে ২৭৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২১ কোম্পানির শেয়ারদর। লেনদেন হয়নি দুটির। দৈনিক গড় লেনদেন হয় ২৬৪ কোটি ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৪ টাকা। আগের সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন হয় ৩১৫ কোটি ৪২ লাখ ৫৯ হাজার ২১৭ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৫১ কোটি ২৭ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে মোট টার্নওভার বা লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৩২০ কোটি ৭৩ লাখ সাত হাজার ৯২১ টাকা। আগের সপ্তাহে যা ছিল এক হাজার ৫৭৭ কোটি ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে টার্নওভার কমেছে ২৫৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ডিএসইতে গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ২৩ হাজার ৬৫০ কোটি দুই লাখ ৮১ হাজার টাকা। শেষ কার্যদিবসে যার পরিমাণ ছিল তিন লাখ ১৯ হাজার ৩৭০ কোটি ৮৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে এক দশমিক ৩২ শতাংশ বা চার হাজার ২৭৯ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে ডিএসইর টপ টেন গেইনার তালিকার শীর্ষে উঠে আসে খাদ্য খাতের অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটির দর ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছে। তালিকায় এর পরের অবস্থানগুলোতে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের আট দশমিক ১৭ শতাংশ, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের দর আট শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের দর ছয় দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। রেনাটার দর ছয় দশমিক ১৮ শতাংশ, সি পার্ল বিচ রিসোর্টের দর পাঁচ দশমিক ৫২ শতাংশ, মতিন স্পিনিংয়ের দর পাঁচ দশমিক ২৬ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের দর পাঁচ শতাংশ, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস চার দশমিক ৬৮ শতাংশ ও প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে চার দশমিক ৬৫ শতাংশ।
অন্যদিকে ২৮ দশমিক ৩০ শতাংশ কমে সাপ্তাহিক দরপতনের শীর্ষে অবস্থান করে নর্দার্ণ জুট ম্যানুফ্যাকচারিং। এসএস স্টিলের দর ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ, স্টাইল ক্রাফটের দর ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ, এডিএন টেলিকমের ২২ দশমিক ৭২ শতাংশ, আজিজ পাইপসের দর ১৮ দশমিক ৮১ শতাংশ, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রোর দর ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ, রিং শাইন টেক্সটাইল ১৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, জেমিনী সি ফুডের দর ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের দর ১৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ভিএফএস থ্রেডের দর ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ কমেছে।
ডিএসইতে টার্নওভারের দিক থেকে শীর্ষ ১০ কোম্পানি হলো লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, এডিএন টেলিকম, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, ব্র্যাক ব্যাংক, বীকন ফার্মা, নর্দার্ণ জুট, রিং শাইন টেক্সটাইল, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড।
অন্যদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৭টির, কমেছে ২৩১টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২০টির দর।
সিএসইতে গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএসসিএক্স কমেছে এক দশমিক ২৯ শতাংশ। এছাড়া সিএএসপিআই সূচক এক দশমিক ৩১ শতাংশ, সিএসই৫০ সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, সিএসআই সূচক এক দশমিক ২৩ শতাংশ কমেছে। সিএসই৩০ সূচক বেড়েছে দশমিক ৯৯ শতাংশ।
সিএসইতে গেল সপ্তাহে টার্নওভারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ কোটি ২৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৬ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৬৫ কোটি ১২ লাখ ৩৮ হাজার ১৩৫ টাকা। এ হিসেবে লেনদেন কমেছে ৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে সিএসইতে সাপ্তাহিক টপ টেন গেইনার তালিকার শীর্ষে উঠে আসে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। সোনারগাঁও টেক্সটাইলের দর ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের দর ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ডেল্টা স্পিনার্সের দর ১১ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে। এরপরের অবস্থানগুলোতে থাকা হাওয়েল টেক্সটাইলের দর ১১ দশমিক ১১ শতাংশ, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের দর ১১ দশমিক ১১ শতাংশ, জি কিউ বলপেনের দর ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ, ব্র্যাক ব্যাংকের দর ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, এপেক্স ফুটওয়্যারের দর আট দশমিক ১৮ শতাংশ, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ছয় দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে টপ টেন লুজার তালিকার শীর্ষে উঠে আসে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স। এসএস স্টিলের দর ২৭ দশমিক ১৪ শতাংশ কমেছে। এর পরের অবস্থানগুলোতে ছিল এডিএন টেলিকম, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো, রিং শাইন টেক্সটাইল, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, জাহিন স্পিনিং, ভিএফএস থ্রেড ও সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ।
সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানি হলোÑলাফার্জ হোলসিম, বীকন ফার্মা, এডিএন টেলিকম, রিং শাইন, বেক্সিমকো লিমিটেড, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এসএস স্টিল ও সি পার্ল রিসোর্ট।