পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহজুড়ে নেতিবাচক প্রবণতায় বিনিয়োগকারীরা বেশ হতাশ। সূচকের পতন দিয়ে চলতি সপ্তাহের লেনদেন শুরু হওয়ায় অনেকেই শঙ্কিত। কেবল সূচকের পতনই নয়, বাজারের স্বাভাবিক গতিও অনেকটা কমে গেছে। লেনদেন কম। বাজারে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো খাত বা বিশেষ কোনো কোম্পানির কার্যক্রম না থাকা সত্ত্¡্ওে একে স্বাভাবিক মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সূচকের ৫-১০ পয়েন্ট ওঠানামা বাজার স্থিতিশীলতার পূর্বলক্ষণ। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ড. জহিরুল ইসলাম, স্টারলিং স্টকস অ্যান্ড সিকিউরিটিজের সিইও এসএম নাসির উদ্দিন।
আলোচনার শুরুতে ড. জহিরুল ইসলাম বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটে ইনডেক্সের উত্থান এবং পতন একটি স্বাভাবিক বিষয়। গত সপ্তাহের ইনডেক্স ৩৫ পয়েন্ট ডাউন খুবই সামান্য বিষয়। তার মতে এটা খারাপ নয়, ভালো দিক। তিনি বলেন, এমন তো হতে পারে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বা প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার কালেকশন করছে।
ড. জহিরুল ইসলাম বলেন, ডিএসইর সেরা ২০ এ এখন যে কোম্পানিগুলো আছে তারা বেশ কিছুদিন ধরেই একই অবস্থানে রয়েছে। ওই শেয়ারগুলোর কিন্তু হঠাৎ করেই বড় ধরনের দরপতন হচ্ছে না। মোটামুটি একটি অবস্থানে রয়েছে। এ সময় অনেকেই সামনে ভালো বাজারের প্রত্যাশায় শেয়ার সংগ্রহ করে রাখছে।
লভ্যাংশ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট কোম্পানির দর পড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, শেয়ার কেনার পর যে উত্তেজনা থাকে তা লভ্যাংশ ঘোষণার সংবাদ পাওয়া মাত্র কেটে যায়। তখন অনেকেই সামান্য লভ্যাংশ নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। যে কারণে দরপতন হয়।
লভ্যাংশ যারা পাবেন বা যাদের কাছে রেকর্ড ডেটে শেয়ারগুলো থাকবে তাদের বিও হিসাবে বোনাস শেয়ারগুলো যোগ হওয়ার পর শেয়ার দর কী অবস্থানে যাবে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. জহিরুল ইসলাম বলেন, এটা ওই সময়ের ডিমান্ডের ওপর নির্ভর করবে।
বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছেÑ এমন গুজবের ভিত্তিতে বাজার যখন পতনের দিকে থাকে, তখন এই গুজব অনেক বড় রকমের কাজ করে। দেখা যায়, যারা মধ্যমমানের বিনিয়োগকারী অথবা যারা একটু সেফ সাইটে থাকে তারা তখনই শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেয় ফলে বাজারে বড় ধরনের পতন দেখা যায়। গুজব থেকে বের হওয়ার উপায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জহিরুল ইসলাম বলেন, হুজুক বা গুজবে কান না দিয়ে দীর্ঘ সময় মার্কেটে থাকাই ভালো। তিনি বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে তিন লাখ কোটি টাকা ইনভেস্ট হচ্ছে না। অলস পড়ে আছে। এই টাকাগুলো তো আজীবন অলস থাকবে না, একটা সময়ে বাজারে ঢুকবে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমেই ক্যাপিটাল মার্কেটে টাকাগুলো আসবে। তিনি বলেন, সরকার যদি দেশের আরও উন্নয়ন চায় তবে ক্যাপিটাল মার্কেটকে কাজে লাগাতেই হবে।
এসএম নাসির উদ্দিন বলেন, বিনিয়োগকারীদের সচেতন করাতে কিছুদিন আগে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা যেন হুজুগে কান দিয়ে শেয়ার না কেনে, তারা যেন শেয়ার মূল্যায়ন করে দেখে শুনে কেনে এ ব্যাপারে অনেক কাজ হচ্ছে। বাজারে প্রাণ নেই- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনকার বিনিয়োগকারীরা অনেক সচেতন, তারা দেখেশুনে শেয়ার কিনছে। বাজারে বিনিয়োগ আসছে। অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভেঙে শেয়ার কিনছে। তারা ভালো মৌলভিত্তির যেসব শেয়ারের দর একটু নিচে আছে সেগুলোই কিনছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বাজারে প্রাণ নেই। কিন্তু এটা প্রাণের গতিসঞ্চারের সময়। লভ্যাংশকে কেন্দ্র করে অনেক শেয়ারের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি লংকাবাংলার উদাহরণ দেন। তার মতে, বাজার ভালো দিকেই যাচ্ছে, স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। সূচকের পাঁচ দশ পয়েন্ট ওঠানামা বাজার স্থিতিশীলতার পূর্ব লক্ষণ বলে তিনি মনে করেন।
১০ টাকা দামের শেয়ার ২০ টাকা দাম হলো কিন্তু পূর্বে যে এই শেয়ারের মূল্য ৪০ টাকা ছিল সেটার কোন মূল্যায়ন নেই এই প্রসঙ্গে এস এম নাসির উদ্দিন বলেন, প্রাইস নিচের দিকে গেলে এটা নিয়ে সমালোচনা খুব কম হয়। নিচ থেকে ওপরের দিকে গেলেই আলোচনা সমালোচনা বেশি হয়। ডিএসই এবং সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এ বিষয় নিয়ে অনেক কথা বলেছে।
রেকর্ড ডেটের ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা যে লক্ষ্য নিয়ে শেয়ার কিনেছে তা লভ্যাংশ ঘোষণার পূর্বেই যদি পেয়ে যায়, তখন তারা শেয়ারটি বিক্রি করে দেয় এবং পুনরায় বিনিয়োগ করার জন্য বাজার পর্যালোচনা করতে থাকে ।
তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষ দেখে শুনেই শেয়ার কিনছে। সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ভালো ভালো শেয়ারগুলো কিনছে ফলে খুব শিগগিরই বাজারে স্ট্রং ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে যাবে।
সমসাময়িক সময়ে যেসব বিনিয়োগকারী হাই রেটের শেয়ার কিনছে এবং কারেকশনের সময় সেই শেয়ারটি বিক্রি করে দিচ্ছে এবং পরবর্তী সময়ে অপর একটি হাই রেটের শেয়ার কিনছে তারা দুই জায়গাতেই লুজার হচ্ছে, এই বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের স্বভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গত কয়েক বছর ছিল। ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা ছিল না। বর্তমানে এ ধরনের প্রবণতা মধ্যে নেই । এখন তারা হুজুগে শেয়ার বিক্রি করছে না। তাদের মধ্যে এখন শেয়ার ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ছে।
বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ইনডেক্স গুরুত্বপূর্ণ নাকি কোম্পানি এমন প্রশ্নে নাসির উদ্দিন বলেন, পুঁজি যেমন একটি হাতিয়ার তেমনি ব্যাকআপ পুঁজিও একটি বড় হাতিয়ার। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ধৈর্য। যে যত বেশি ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারে সে তত বেশি লাভবান।
ওটিসিতে অনেক কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার পরও তাদের প্রধান মার্কেটে আনার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না? এক দর্শকের এমন প্রশ্নে নাসির উদ্দিন বলেন, ডিএসই ও সিএসই তে একটা মার্কেটিং ইউনিটি থাকা দরকার। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকবেই। যেসব কোম্পানির পণ্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা ব্যবহার করি তারা কেন তালিকাভুক্ত হবে না, তাদের উচিত ক্যাপিটাল মার্কেটে তালিকাভুক্ত হওয়া।