মো. আসাদুজ্জামান নূর: ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেলেও টানা তিন কার্যদিবস পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন আবার এক হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল সূচকের উত্থানে লেনদেন হয়েছে। বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন বিনিয়োগকারীরা। পরিস্থিতি বুঝে বিনিয়োগ করবেন তারা। এ কারণে বাজারে কেনাবেচা কম হয়েছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেনের শুরু থেকে ক্রেতারা সক্রিয় ছিলেন। তবে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানো ও মুনাফার আশায় শেয়ার বিক্রি করেননি বিনিয়োগকারীরা। উল্টো শেয়ার ধরে রেখেছেন। ফলে টাকার অঙ্কে লেনদেন কিছুটা কমেছে। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবারে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ২৪৫ কোটি ১৯ লাখ টাকার। গতকাল সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৮৯৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
তবে লেনদেন কমলেও ইতিবাচক ছিল সূচক। গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে তিন মিনিটে সূচক ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে শুরু হয় লেনদেন। বেলা সোয়া ১১টায় সূচক বেড়ে যায় ৪৮ পয়েন্ট। তবে সেখান থেকে দুপুর ১২টা সাত মিনিট পর সূচক টানা পড়তে থাকে। আগের দিনের চেয়ে সূচকের অবস্থান পাঁচ পয়েন্ট কম ছিল সে সময়। এরপর আবার পতনের আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। আগের দিনের চেয়ে ২৯ পয়েন্ট বেড়ে শেষ পর্যন্ত সূচকের অবস্থান দাঁড়ায় ছয় হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে। এ নিয়ে টানা তিন কার্যদিবসে সূচক বাড়ল ২৬২ পয়েন্ট।
খাতভিত্তিক লেনদেনে চিত্রে দেখা যায়, গতকাল ১৬টি খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিপরীতে দর কমতে দেখা গেছে তিনটি খাতের শেয়ারের। দিন শেষে লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ২৪৫টির, কমেছে ৭৯টির ও অপরিবর্তিত ছিল ৪৯টির।
গতকাল খাদ্য ও পাট খাতের ক্রয় চাপ থাকলেও ধারাবাহিকভাবে লেনদেন বেশি হয় ব্যাংক খাতের। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থাকা এ খাতটির লেনদেনে অবদান দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে গতকাল দর কমে ১১টির ও অপরিবর্তিত ছিল ১০টির। আগের কার্যদিবসে এ খাতের লেনদেন কিছুটা বেশি ছিল। বৃহস্পতিবার লেনদেনে এ খাতের অবদান ছিল ৩৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বিবিধ খাত। এ খাতের ১১টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে একটি করে কোম্পানির শেয়ারদর কমে ও অপরিবর্তিত থাকতে দেখা গেছে। আগের কার্যদিবসেও এ খাতের লেনদেন ভালো ছিল। বৃহস্পতিবার লেনদেনে এ খাতের অবদান ছিল ১৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।
লেনদেনে ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ অবদান রেখে তৃতীয় অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। আগের কার্যদিবসে এ খাতের অবদান ছিল ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গতকাল এ খাতের ২১টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে ও অপরিবর্তিত ছিল দুটির শেয়ারদর। অন্যদিকে শেয়ারদর হ্রাস পায় ছয়টি কোম্পানির।
এরপর আর কোনো খাতের অবদান ১০ শতাংশ ছাড়ায়নি। চতুর্থ অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লেও লেনদেন কমেছে। আগের কার্যদিবসে এ খাতের অবদান ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ হলেও গতকাল এ খাতের অবদান ছিল সাত দশমিক ৯৬ শতাংশ। ৪১টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে কমে ৯টির ও অপরিবর্তিত ছিল আটটির।
আর পঞ্চম অবস্থানে থাকা বিমা খাতের অবদান দাঁড়ায় ছয় দশমিক ৫৬ শতাংশ। গতকাল লেনদেন হওয়া ৩৯টি কোম্পানিরই শেয়ারদর বাড়ে। ফলে শতভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ায় এ খাতের লেনদেন আগের কার্যদিবসের চেয়ে বেশি ছিল। বৃহস্পতিবার লেনদেনে এ খাতের অবদান ছিল পাঁচ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এছাড়া লেনদেনে এরপর অবদান রেখেছে জ্বালানি, প্রকৌশল, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জীবন বিমা প্রভৃতি খাত।
দিনভর উত্থান-পতনে থাকা পুঁজিবাজার শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক অবস্থান নিয়ে লেনদেন শেষ করতে পারার পেছনে প্রধান অবদান ছিল ওয়ালটনের। কোম্পানিটির তিন দশমিক চার শতাংশ দর বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট। সূচক বাড়াতে প্রধান ভূমিকায় ছিল গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, রবি, একমি ল্যাবরেটরিজ, সিটি ব্যাংক, গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, ব্র্যাক ব্যাংক, সোনালী পেপার ও ওরিয়ন ফার্মা। এ ১০টি কোম্পানির কারণে সূচকে যোগ হয়েছে ২৩ দশমিক ২৭ পয়েন্ট।
গতকাল ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ২৯ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৯৬৫ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে, বিশেষ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ মূল্য সূচক দুই দশমিক ৩২ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ৬৩৮ দশমিক ২৬ পয়েন্টে ও ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচক দুই দশমিক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৪৬১ দশমিক শূন্য সাত পয়েন্টে স্থির হয়েছে।