Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:15 am

সূচক বাড়লেও লেনদেনে ভাটা

মো. আসাদুজ্জামান নূর: টানা তিন কার্যদিবস পতনের পর গতকাল বুধবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন হয়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লেও কমেছে টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ। এদিন লেনদেনে বস্ত্র, বিবিধ, প্রকৌশল ও ওষুধ খাতের আধিপত্য দেখা গেছে।

পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণে সূচক ইতিবাচক ছিল। তবে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কম থাকায় লেনদেন হয়েছে মন্থর গতিতে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, টানা পতনের কারণে আবারও বাজার সংশোধনের দিকে এগোচ্ছে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বিনিয়োগকারীরা। সম্ভাব্য পতন এড়িয়ে চলতেই সচেতনভাবে লেনদেনে অংশ নিচ্ছেন তারা। ফলে লেনদেন তলানিতে নেমেছে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, বুধবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বস্ত্র এবং ওষুধ খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর তাতে গত তিন-চার দিন ধরে শেয়ার বিক্রির প্রবণতায় থাকায় ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতার উপস্থিতি কম ছিল। এ কারণে সূচক বাড়লেও লেনদেন কম হয়েছে।

দিনভর সূচক ওঠানামা শেষে গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৮৮৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৯০৮ কোটি ৮২ লাখ ৪৮ হাজার টাকার শেয়ার। এর আগে ডিএসইতে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর লেনদেন হয়েছিল ৭৩৫ কোটি ৩৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের মধ্যে বুধবার পুঁজিবাজারে সর্বনি¤œ লেনদেন হয়েছে।

গতকালের লেনদেনে আগ্রহের শীর্ষে ছিল বস্ত্র খাত। মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশই ছিল খাতটির দখলে। খাতটিতে আগের দিনের চেয়ে যেমন লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। খাতটির ৭২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিবিধ খাতেও লেনদেন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশে। তবে খাতটিতে ৫৩ শতাংশ কোম্পানির দরপতন হয়েছে। এর পরের স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতেও লেনদেন বেশি হয়েছে। লেনদেনে ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ অবদান রাখলেও খাতটিতে সমান ৪৭ দশমিক ৬২ শতাংশ করে কোম্পানির দর বৃদ্ধি ও পতন হয়েছে।

এ ছাড়া লেনদেনে চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে থাকা ওষুধ ও খাদ্য খাতের লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমেছে। লেনদেন হয়েছে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও পাঁচ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে ওষুধ খাতে ৬৭ শতাংশের বেশি কোম্পানির দর বৃদ্ধি ও খাদ্য খাতে ৫৭ শতাংশের বেশি কোম্পানির দরপতন হয়েছে। লেনদেনে পরের অবস্থানে ছিল যথাক্রমেÑব্যাংক, জীবন বিমা, জ্বালানি, কাগজ, মুদ্রণ ইত্যাদি খাত।

বুধবার ডিএসইতে ৩৭৯ প্রতিষ্ঠানের ১৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৫ হাজার ৩০৩টি শেয়ার ও ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে ১৩৫টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৯টির দাম।

তাতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩০ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৯৪৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩২ পয়েন্ট এবং ডিএস৩০ সূচক বেড়েছে ১৪ দশমিক ১৩ পয়েন্ট।

সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেড। কোম্পানিটির ২ দশমিক ১৩ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে সূচকে যোগ হয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। এছাড়া বেক্সিমকো লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মা, ওয়ালটন হাইটেক, রেনাটা, রবি, সোনালী পেপার, ডেলটা লাইফ, ইউনাইটেড পাওয়ার ও তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে। এই দশ কোম্পানি সূচকে যোগ করেছে ২৭ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট।

বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৪ দশমিক ৯১ পয়েন্ট কমেছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের দরপতনে। আর কোনো কোম্পানি এক পয়েন্টের বেশি সূচক কমাতে পারেনি। সব মিলিয়ে সূচক হ্রাসে ভূমিকা রাখা শীর্ষ ১০০ কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৭ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট।

এদিন সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার। এরপর ছিল আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ওরিয়ন ফার্মা, বিএসসি, ডিএসএসএল, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফরচুন শুজ, সোনালী পেপার, এপেক্স স্পিনিং এবং লাফার্জহোলসিম লিমিটেড।