শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ: সূর্যমুখীতে ছেয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন ফসলের মাঠ। মাঠে মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে এ ফুলের সৌন্দর্য। ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে চারপাশে। মৌমাছি এসে খেলা করছে ফুলে ফুলে। ক্ষেতজুড়ে ফোটে ওঠা সূর্যমুখী ফুলের হলুদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করছেন শত শত মানুষ। ফুলের সৌন্দর্যকে নিজের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি করছেন অনেকে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবার চাষ হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ বন্যাকবলিত এলাকা। বন্যার কারণে এখানে জমিতে প্রচুর পরিমাণ পলি পড়ে। এই পলি মাটি তেলজাতীয় ফসল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বন্যার কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য কৃষি বিভাগ থেকে আর্থিক অনুদান চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। এরই পরিপ্র্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জেলার তিন হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য। এর মধ্যে সবচেয়ে চাষাবাদ করা হয়েছে বেলকুচি উপজেলা ও যমুনা নদীর চরে। কৃষককে সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য বীজ সার দেয়া হয়। শুধু বেলকুচিতে ৩০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষাবাদ করা হয়েছে।
প্রকৃতিকে রাঙিয়ে সূর্যমুখী এখন সিরাজগঞ্জের ফসলের মাঠজুড়ে হলুদের গালিচা বিছিয়ে অপরূপ সাজে সেজেছে। আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় এখানে এ ফুল চাষে সাফল্য এসেছে। পাশাপাশি ফুল থেকে উৎপাদিত তেল ও খৈল বিক্রি করে লাভবান হবেন কৃষকরা। মূলত ভোজ্যতেল ও গরুর জন্য খৈল তৈরির উদ্দেশ্যে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেয় কৃষি বিভাগ। ফুল চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এই চাষে ঝুঁকছেন অন্য কৃষকরাও।
ক্ষেতজুড়ে সূর্যমুখী ফুল ফুটে ওঠায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন দেখতে। ফুলের চাষ বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের উৎকৃষ্টমানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর বীজ ছাড়ানোর পর মাথাগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গাছ ও পুষ্পস্তবক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বেলকুচি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্যাণ প্রসাদ পাল বলেন, বেলকুচি উপজেলা নদী বিধৌত উপজেলা। এখানে প্রত্যেক বছর বন্যার কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। বন্যার পর জমিতে প্রচুর পরিমাণ পলি পড়ে। এই জমিতে তেল জাতীয় ফসল চাষে উপযোগী।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট প্রেরণ করেছিলাম বেলকুচিতে, যে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের সহযোগিতা করার জন্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি পুনর্বাসন আওতায় উপজেলায় ৩০০ কৃষককে সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য কৃষককে বীজ সহায়তা দেয়া হয়। এ বছর ৩০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হচ্ছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘এ বছর জেলা তিন হাজার কৃষককে সূর্যমুখী চাষের জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। বীজ সহায়তা দেয়া হয়েছে কৃষকদের। সূর্যমুখী চাষাবাদের কারণে দেশ তেল সমৃদ্ধ হবে। সরিষার তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেলের মান ভালো। বিঘাতে প্রায় ৮ মণ ফলন হয়। সূর্যমুখী চাষ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে তেল আমদানি করতে হবে না। এতে খরচ কমে আসবে।’