বেলাল হোসাইন বিদ্যা: প্রশাসনিক ভবনের চতুর্থ তলা। লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক মিজানুর রহমানের কক্ষ। চারপাশে ছড়ানো-ছিটানো নানা জিনিস, কম্পিউটার টেবিল, বসার চেয়ার-টেবিল আর একপাশে একটি আলমারি। আলমারিটি পূর্ণ হয়ে আছে নানা ধরনের বইয়ে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের লাইব্রেরিটি নিয়ে কথা বলছি। ‘সৃষ্টিশীলতাই সার্থকতা’ স্লোগান সামনে রেখে এ লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। লোকপ্রশাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে আরও পরে। তবু প্রতিনিয়ত এ বিভাগের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গৎবাঁধা পথ থেকে বেরিয়ে এসে একটি ভিন্নধর্মী পথের সন্ধান দিয়েছে এ গ্রন্থাগার।
পৃথিবীর ইতিহাস থেকে শুরু করে সোফির জগৎ, ওঙ্কার, সূর্য তুমি সাথী প্রভৃতি বই রয়েছে এখানে। অরুন্ধতী রায় থেকে হুমায়ূন আজাদ, নিমাই ভট্টাচার্য থেকে হুমায়ূন আহমেদ, বার্ট্রান্ড রাসেল, ম্যাক্সিম গোর্কি, আহমেদ শরীফ, ইয়স্তেন গার্ডন, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের মতো নামকরা লেখকের বই রয়েছে। বিষয়েও আছে বৈচিত্র্য। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানা বইয়ের পাশাপাশি আছে কবিতা, প্রবন্ধ, ছোট গল্প, উপন্যাস, শিক্ষা বিষয়ক গ্রন্থ। ইংরেজি সাহিত্যের অনুবাদের পাশাপাশি আছে ইংরেজি ভাষার বইও। কী নেই এখানে? পরিমাণের বিচারে খুব বেশি হলে ৫০০ থেকে ৬০০ বই। তবে তা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের খোরাক জুগিয়ে চলেছে।
কলেজ গণ্ডি পেড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখে এক নতুন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের, ঠিক সেই সময় আলোকবর্তিকা হয়ে আগলে দাঁড়ায়, মিজানুর রহমান ও তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ গ্রন্থাগার। অনেকের ব্যক্তিগত সংগ্রহে অথবা পারিবারিক লাইব্রেরিটি হয়তো এর চেয়েও বড়, সেখানকার বইয়ের সংখ্যা হয়তো এর কয়েকগুণ হবে, তাহলে কেন এ লাইব্রেরিটি নিয়ে আজ কথা বলা? এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো এটা শুধু লাইব্রেরিই নয়, এটা জ্ঞানসমুদ্রে প্রবেশের যেমন একটি প্রাথমিক স্তর, তেমনি সেই সমুদ্রে টিকে থাকার লড়াইয়ের প্রধান মাধ্যমও। এ লাইব্রেরির বইগুলো শুধু পড়ার জন্যই দেওয়া হয় না, যেমনটি অন্যান্য লাইব্রেরিতে হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থী যারা এখান থেকে বই নিয়ে থাকেন, তাদের এ বইয়ের ওপর একটি রিভিউ জমা দিতে হয়। শুধু ‘রিভিউ’তেই শেষ নয়, প্রতি বৃহস্পতিবার সেই বই নিয়ে আলোচনা করার জন্য বই আড্ডার আয়োজন করা হয়। এসবের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বেড়ে যায়। এ আড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের শিক্ষার্থীরাই এখানে আসেন।
শিক্ষার্থী