Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 9:45 pm

সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মনজুর আলমের বিরুদ্ধে প্রায় তিন কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে অধ্যক্ষ ও তার অফিস সহকারী নির্মল চন্দ্র দেবশর্মার বিরুদ্ধে কলেজের বিভিন্ন খাতের অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের আসামি করে জালিয়াতি ও আত্মসাতের মামলা করেছে দুদক। দুদকের দিনাজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মুহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।

তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কলেজের দুই কোটি ৮৫ লাখ ৯৪ হাজার ৭১২ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা দণ্ডবিধির ৪০৯/ ৪৬৭/৪৬৮/ ৪৭১/ ৪২০/ ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা বিভিন্ন কৌশলে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কৌশল ছিল ক্যাশবইয়ে আয় কম দেখানো। ক্যাশবইয়ে আয় কম দেখিয়ে এক কোটি ৯৭ লাখ ২৯ হাজার ৮৪৭ টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তিনটি ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে আট হাজার ২৯৩ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আটটি ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে এক লাখ ১৪ হাজার ৮৭২ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৪টি ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ৬৪ হাজার টাকা, অনুরূপভাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৬টি ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ৫২ হাজার টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৩টি ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ২০ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৯টি ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে এক লাখ ৭৭ হাজার ১৬২ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে সবমিলিয়ে ২৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা লুটপাট হয়েছে।

ক্যাশ বইতে প্রদর্শন না করে ছয়টি জাল রশিদের মাধ্যমে ৪৩ লাখ ৫৪ হাজার ১২০ টাকা, রসিদের মূল কপি ও কার্বন কপিতে টাকার পরিমাণ পরিবর্তন করে তিন লাখ ৭৯ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাৎ করেন তারা। এছাড়া ভিন্ন দুটি খাতে জাল ভাউচারের যথাক্রমে ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৭ টাকা এবং ১৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে অধ্যক্ষের নেতৃত্বাধীন চক্র।

সবমিলিয়ে আত্মসাতের মোট পরিমাণ দুই কোটি ৯৫ লাখ ৯৯ হাজার ৬০২ টাকা, যেখান থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ব্যয় ১০ লাখ চার হাজার ৮৯০ টাকা বাদ দিলে দুই কোটি ৮৫ লাখ ৯৪ হাজার ১২ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। ২০১১ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন কৌশলে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন আসামিরা।

২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির অভিযোগ এনে অধ্যক্ষের অপসারণ ও শিক্ষকদের বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে অধ্যক্ষ মনজুর আলমকে অবরুদ্ধ করেছিলেন শিক্ষকরা। শেষ পর্যন্ত পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর দুদকের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে।