প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সদরের বালুইগাছা এলাকার বাঁশগাদা খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। তবে সেতুর চারপাশে অথৈ পানি, অস্তিত্ব নেই দুই পাশের সংযোগ সড়কের। বিলের মাঝে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা সেতুটি পার হতে চাইলে ব্যবহার করতে হয় নৌকা কিংবা সাঁতরে গিয়ে তারপরে সেতু পার হতে হয়। যদিও সেতুটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল পানি নিষ্কাশন ও গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন করা। তবে এ ধরনের কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না এখানকার মানুষ।
বেতনা নদীর বেঁড়িবাধ থেকে বালুইগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তার সংস্কারের মধ্য দিয়ে সেতুর সঙ্গে সংযোগের দাবি স্থানীয়দের। তবেই সেটার সুফল পাবেন এই জনপদের মানুষ। যদি এই এক কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা না হয়, সেক্ষেত্রে প্রায় ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এই সেতুটি নিছক রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় ছাড়া কিছু নয় বলে জানান স্থানীয়রা।
সাতক্ষীরা সদর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিস থেকে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরা সদরের বালুইগাছা এলাকার জামসেদ হোসেন জানান, সেতুটি কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মাণ করা হয়, যে কারণে সেতুর কোনো সুফল এখানকার লোকজন ভোগ করতে পারছেন না। এটা নিছক সরকারি অর্থ অপচয় করা ছাড়া আর কিছু নয়। যদি সেতু পার হতে চান সেক্ষেত্রে নৌকা দিয়ে কিংবা সাঁতার কেটে এসে তারপর পার হতে হবে। এটা সত্যিই হাস্যকর। এপাশ দিয়ে অনেক স্কুলশিক্ষার্থী নিয়মিত পারাপার হয়। সেক্ষেত্রে তাদের অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। অন্য মৌসুমে কষ্ট করে টুকটাক চলাফেরা সম্ভব হলেও বর্ষার মৌসুম জুড়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সবাইকে। এত টাকা দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না।
একই এলাকার সবুজ হোসেন জানান, সেতু তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু সেতুর দুপাশে কোনো রাস্তা নেই। তাহলে এ সেতু দিয়ে কী হবে? এ সেতু পার হতে গেলে প্রয়োজন পড়ে নৌকার। বিলের মধ্যে এমন আজব সেতুর উপকার কী, সেটা যারা তৈরি করেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন।
স্থানীয় বালুইগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, নৌকায় করে কিংবা সাঁতরে সেতু পারাপার হয়ে তারপরে স্কুলে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে তাদের জামাকাপড় ও বইখাতা পানিতে ভিজে যায়। সেতুর দুপাশে রাস্তা করা হলে তাদের এই দুর্দশা থেকে মুক্তি মিলবে।
এদিকে সরকারি অর্থ অপচয়ের বিষয়টি মানতে রাজি নন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। সাতক্ষীরা সদর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইয়ারুল হক বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুর সুফল ভোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, সেক্ষেত্রে দুপাশে সংযোগ সড়ক হলে সেতুর সুফল আরও বেড়ে যাবে।
তিনি জানান, ব্রিজের দুপাশে চলাচলের জায়গাটি মাটি দ্বারা ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। বৃষ্টির মৌসুম গেলে কাজটি শুরু করা হবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, সেতুটি স্থানীয় বাসিন্দাদের উপকারে আসছে না বিষয়টা এমন নয়। যেখানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে তার পাশাপাশি দু’পাশের সংযোগ সড়কও রয়েছে। সেক্ষেত্রে যেটা করতে হবে দু’পাশের রাস্তাটা চলাচল উপযোগী করে দিতে হবে। তারপর সেটার পুরোপুরি সুবিধা পাবেন বাসিন্দারা।