দেশের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়েকশ’ নদ-নদী একসময় যোগাযোগের প্রধানতম মাধ্যম ছিল। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে অনেক। সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে নদীগুলোর ওপর অসংখ্য ছোট-বড় সেতু নির্মিত হয়েছে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু মানুষের তৎপরতার সেতুগুলো মারাত্মক হুমকিতে। নাব্য হারিয়ে মরা খালে পরিণত হচ্ছে নদী। দেশের বিভিন্ন সেতুর পাশ থেকে প্রায়ই অবৈধভাবে বালি তোলার খবর আসছে। নদী ভরাট করেও নানা কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব কর্মকাণ্ড চললেও এর বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। ফলে সেতু ও নদীগুলোর ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক।
‘অবৈধ ইট ও বালুমহালে ঝুঁকি: দেশের বিভিন্ন স্থানের সেতু রক্ষায় পাঁচ নির্দেশনা জারি’ শিরোনামে গতকালের দৈনিক শেয়ার বিজে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বালুমহাল হিসেবে ইজারা না দিলেও অবৈধভাবে বালি তোলায় অনেক সেতুর স্থায়িত্ব কমে যাওয়াসহ ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন সেতুর নিচে অবৈধভাবে মাটি ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটমহাল। ফলে নদী নাব্য হারাচ্ছে, যা সেতুর স্থায়িত্ব নষ্ট করছে। অবৈধ এসব বালু ও ইটমহালের বিরুদ্ধে এবং সেতু রক্ষায় শক্ত অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এ নির্দেশনার আশু বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করি।
দেশে সওজের অধীন ২২ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কে তিন হাজার ৫৪৮টি ছোট-বড় সেতু, ৮৫৬টি বেইলি সেতু ও ১৪ হাজার ৮১৪টি কালভার্ট রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার নদীপথ। আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডে এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই। কিন্তু নদী ও সেতুগুলো কিছু অর্থলোভী মানুষ ঝুঁকিতে ফেলছে, যা পরিবেশগতভাবেও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে বলে অভিযোগ। তবে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে প্রত্যাশা।
খবরেই উল্লেখ করা হয়েছে, বালি উত্তোলন বা বালুমহাল উচ্ছেদ, ইটভাটা বন্ধ এবং প্রয়োজনে উচ্ছেদ, পুরোনো জরাজীর্ণ বেইলি সেতু অপসারণ, পানি নিষ্কাশনের মতো কিছু নির্দেশনা জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরকে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে এখানেও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা। এছাড়া যারা অবৈধ বালি ও ইটমহাল গড়ে তুলছে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।