নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শেয়ার পুঁজিবাজারে আসবে। আশা করা যায়, অক্টোবরের পরে যাবে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর মধ্যেই এগুলোকে নিয়ে আসা হবে। সোনালী ব্যাংককেও আমরা নিয়ে আসব। তবে এটি একটু সময় লাগবে। বাকিগুলো আমরা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে তালিকাভুক্ত করে ফেলব। এ কাজগুলো হয়তো দুই পর্যায়ে হতে পারে।’
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বর্তমানে শুধু রূপালী ব্যাংকের কিছু শেয়ার রয়েছে বেসরকারি খাতে। আর শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন অন্য তিন বাণিজ্যিক ব্যাংকেরও শেয়ার পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন চার ব্যাংকের শেয়ার একযোগে পুঁজিবাজারে ছাড়া হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ার অফলোডের কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো শেয়ার ছাড়লে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে আসবেন বলে আশা করা যায়। কারণ, ব্যাংকগুলোর মালিক রাষ্ট্র, যে কোনো ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতিতেও এসব ব্যাংকের গ্যারান্টার রাষ্ট্র নিজেই। ফলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়া হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে। এরই মধ্যে পুঁজিবাজারে সূচক বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি যেসব ব্যাংক রয়েছে, তার মধ্যে একটির শেয়ার বাড়ানোসহ পাঁচটি ব্যাংক আমরা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসব। এরই মধ্যে বাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের শেয়ার বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হবে। পাশাপাশি নতুনভাবে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডকে (বিডিবিএল) নিয়ে আসা হবে। এরপর অগ্রণী, জনতা এবং সর্বশেষ সোনালী ব্যাংককে নিয়ে আসা হবে। এ বিষয়ে একটি কমিটিও করা হয়েছে। কমিটিতে পাঁচ ব্যাংকের প্রতিনিধি থাকবেন এবং সমন্বয় করবে আইসিবি।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে আমরা এ মুহূর্তে অবকাঠামো বিনিয়োগ করে চলেছি। অর্থনীতি যেখানে ওঠানামা করে, সেগুলোতে আমরা হাত দেব। এজন্য আমাদের ব্যাংক-বিমা খাত দেখতে হবে। এগুলো ঠিক করতে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক যে সমস্যাগুলো ছিল, সেগুলো দূর করা হচ্ছে। আইনি কাঠামোতে সমস্যাগুলো দূর করা হয়েছে। এনবিআর ও ব্যাংক খাত দেখার জন্য ?দুটি ডেডিকেটেড বেঞ্চ হয়েছে। যার ফলে আমাদের মামলার সংখ্যা কমে যাবে। অপরাধী অপরাধ করলে মামলা করতে হবে এবং এর রায় দ্রুত হবে। এতে করে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরবে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাওয়ার সেক্টর থেকে লাভজনক সাত প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাতটির মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান নতুনভাবে আনা হবে, বাকি দুটির শেয়ারের পরিমাণ বাড়ানো হবে। বাজার শক্তিশালী করতে সরকার সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে বাজার বাজারের মতো থাকবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকার করে না। আমরা যদি কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখি, তবে এর উপকার পাবে জনগণ। বাজারে একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসতে পারি এটি যাবে জনগণের কাছে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে এলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল অর্থনৈতিক এলাকায় কোথাও কোনো খারাপ সংকেত দিচ্ছে না। আমাদের একটি মাত্র খাত এখনও নেতিবাচক আছে। তবে একটি খাত দিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি বিবেচনা করা যাবে না। প্রত্যেক দেশেই সব খাত যে সমভাবে চলবেÑএমনটি নয়। বিশ্বের অর্থনৈতিক বিবেচনায় আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভালো। পুঁজিবাজার চাঙা করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দরকার। একটি জায়গা নিয়ে সব সময় আমরা চিন্তিত আর সেটি হচ্ছে পুঁজিবাজার। আমরা যে কোনো মূল্যে পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে চাই।’