নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) অধিকাংশ সূচকে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। ওই মাসে মোবাইল ব্যাংকিং নামে অধিক পরিচিত এই সেবার আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় সাত কোটি ৫৯ লাখ ৭৮ হাজার। আগস্টে নিবন্ধিত গ্রাহক ছিল সাত কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার। অর্থাৎ এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ২৪ লাখ বা তিন দশমিক ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের হালনাগাদ তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সক্রিয় হিসাব ছিল তিন কোটি ৪৩ লাখ ৮৯ হাজার। আগস্টে সক্রিয় হিসাব ছিল তিন কোটি ৩০ লাখ ৯৮ হাজার। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, টানা তিন মাস একবারও লেনদেন না হলে ওই হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত মাসে এই সেবার আওতায় প্রতিদিন গড়ে ৭০ লাখ ৭৮ হাজার লেনদেন হয়। আর অর্থের পরিমাণ বিবেচনায় প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ১৮১ কোটি ১১ লাখ টাকা লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। সংখ্যার দিক দিয়ে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে সাত দশমিক ৫০ শতাংশ এবং অর্থের পরিমাণের দিক দিয়ে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে তিন দশমিক ১০ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। আগস্টের তুলনায় মোট লেনদেন শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ কমলেও আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৫১ হাজার ৭৭৮।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন সেবা। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো, অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে দুই দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। উত্তোলন হয়েছে ১১ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা, যা আগস্টের তুলনায় সাড়ে তিন দশমিক ৭০ শতাংশ কম।
এমএফএসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে আট হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ প্রায় ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৮৭ কোটি ৬২ লাখ টাকায়। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৩৯২ কোটি টাকা। সরকারি পরিশোধ ৮১ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৬০৬ কোটি টাকা।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে। বর্তমানে মোট ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।