সেপ্টেম্বরে আরটিজিএসে ৭৭ কোটি ডলার তাৎক্ষণিক লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে প্রথমবারের মতো এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন চালু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট বা আরটিজিএসের মাধ্যমে এ লেনদেন অনলাইনে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। চালু করার প্রথম মাসে (সেপ্টেম্বর) তাৎক্ষণিক ৭৭ কোটি ডলার (৭৭০ মিলিয়ন) লেনদেন করে ব্যাংকগুলো। ছয়টি বৈদেশিক মুদ্রায় আন্তঃব্যাংক লেনদেন চালু করার সুযোগ দেয়া হলেও এক মাসে মাত্র দুই ধরনের মুদ্রায় লেনদেন করেছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকের হিসাবে যত দ্রুত বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন নিষ্পত্তি হবে, তত দ্রুত ব্যাংক নিজের প্রয়োজনও মেটাতে পারবে। এতে ব্যাংকিংয়ে গতি আসবে। নতুন হিসাবে লেনদেন কম হচ্ছে। তবে আগামীতে এ লেনদেন আরও বাড়বে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন ডলার ও ইউরোতে এক মাসে ২০ হাজার ৫৫৩টি লেনদেন নিষ্পন্ন হয়, অঙ্কে যার পরিমাণ ৭৭ কোটি  ডলার। এ সময়ে ব্যক্তি টু ব্যক্তি লেনদেন নিষ্পত্তি হয় ৯০৯টি। বাকি লেনদেন হয় ব্যাংক টু ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক মুদ্রায় সবচেয়ে বেশি লেনদেন করছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন করেছে ইউসিবি ব্যাংক। এরপর ইস্টার্ন, এক্সিম, প্রাইম ও ঢাকা ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, আগে একটি ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিলে তা পরের দিন গ্রাহক ব্যাংকের হিসাবে জমা হতো। এখন সেটা হবে তৎক্ষণাৎ। এতে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনমতো ওই বৈদেশিক মুদ্রা সেদিনই ব্যবহার করতে পারবে। প্রয়োজন অনুসারে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার বেড়ে যাবে। এক দিনেই একই মুদ্রা কয়েক ব্যাংকের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর আরটিজিএস বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এর আগে গত ২৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। এর আগে শুধু দেশীয় মুদ্রা টাকার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি চালু আছে। একটা সময় আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মাধ্যম ছিল কাগজ-কলমভিত্তিক সনাতন পদ্ধতি। তখন ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ লেনদেন দিন শেষে নিষ্পত্তি হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে, দেশীয় মুদ্রার পাশাপাশি ডলারসহ অন্যান্য বিদেশি মুদ্রার রিয়েল-টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) বা তাৎক্ষণিক লেনদেন শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন এই পদ্ধতিতে ব্যাংকগুলো আরও আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে লেনদেন নিষ্পত্তি করতে পারবে।

আরটিজিএসের ব্যবহার-সম্পর্কিত একটি নীতিমালাও প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে বলা হয়েছে, দেশে এখন মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড, ইউরো, কানাডার ডলার ও জাপানের ইয়েন মুদ্রা কাগজ-কলমভিত্তিক সনাতন লেনদেন ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হচ্ছে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, পরিশোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীর অ্যাকাউন্টের ধরন উল্লেখ করতে হবে। একটি লেনদেনে ব্যাংক সর্বোচ্চ ১০০ টাকা চার্জ নিতে পারবে। আরটিজিএস পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রায় আন্তঃব্যাংক তারল্য সুবিধা নেওয়া যাবে না। ব্যাংকগুলো আরটিজিএসের মাধ্যমে অনুমোদিত এডি শাখা ও ব্যাংকের প্রধান শাখায় এই লেনদেন করতে পারবে। অন্য কোনো শাখা থেকে এই লেনদেন করা যাবে না।

দেশে ২০১৫ সাল থেকে চালু হওয়া আরটিজিএস থেকে যে কোনো অঙ্কের অর্থ পরিশোধ নিষ্পত্তিতে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ড সময় লাগে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ১১ হাজার শাখার বেশিরভাগই এ ব্যবস্থায় যুক্ত রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০