শেয়ার বিজ ডেস্ক : চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৫৫ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৩৫ শতাংশ বেশি। কোনো মাসে দেশটির রফতানিতে এটিই রেকর্ড সর্বোচ্চ। মেমোরি চিপ ও ইস্পাতপণ্য বিক্রি এতে বড় ভ‚মিকা রেখেছে। খবর রয়টার্স।
দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। মাসশেষে এটি দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে। ১৯৫৬ সাল থেকে প্রকাশিত হওয়া এ ডেটায় এটিই মাসিক হিসাবে দেশটি থেকে সর্বোচ্চ রফতানি। এর আগে ২০১৪ সালের অক্টোবরে ৫১ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া ৩৫ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি ২০১১ সালের জানুয়ারির পর এবারই হলো।
গত মাসে এ নিয়ে টানা ১১ মাস ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার রফতানি বাড়লো। আর টানা ৯ মাস ধরে দুই অঙ্কের রফতানি প্রবৃদ্ধি পাচ্ছে দেশটি।
রফতানির পাশাপাশি গত মাসে আমদানিও বেড়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ওই সময়ে দেশটি ৪১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ২১ দশমিক সাত শতাংশ বেশি। আমদানিতেও এ নিয়ে টানা ৯ মাস ধরে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দেশটি।
দেশে ও বিদেশে শক্ত চাহিদার কারণে আমদানি ও রফতানি উভয় খাতে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি পাচ্ছে দেশটি। গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।
তথ্যমতে, গত মাসে রফতানির উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে বড় ভ‚মিকা রেখেছে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি। এছাড়া প্রধান ১৩টি রফতানি পণ্যের মধ্যে গত মাসে ১০টিতেই দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে উন্নত ও উদীয়মান বাজারগুলোতে চাহিদা স্থিতিশীল ছিল।
গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের চিপ রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৭০ শতাংশ বেশি। এখন পর্যন্ত যেকোনো মাসের তুলনায় এ পরিমাণ সর্বোচ্চ। ইস্পাত রফতানিও টানা ছয় মাস ধরে বাড়ছে। গত মাসে চার দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের ইস্পাতপণ্য রফতানি হয়েছে। টানা ছয় মাস ধরে বাড়ছে কম্পিউটার চালান আর টানা ১১ মাস ধরে বাড়ছে ডিসপ্লে প্যানেল রফতানি।
মধ্যপ্রাচ্য বাদে বিশ্বের সব অঞ্চলে দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্য রফতানিতে গত মাসে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন বা আসিয়ানে মাসিক রেকর্ড ৯ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে ভিয়েতনামেই রফতানি হয়েছে চার দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
এছাড়া ভারতে রফতানি হয়েছে এক দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এ নিয়ে টানা ৯ মাস ধরে দেশটিতে রফতানি বাড়ছে। এছাড়া চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির প্রায় অর্ধেকটাই রফতানিনির্ভর। দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যদ্রব্য রফতানির পরিমাণ তিন মাস নি¤œমুখী থাকার পর গত বছরের নভেম্বরে আবার তা ঘুরে দাঁড়ায়। এর পর থেকে রফতানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, যা শিল্প পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শিল্প, বাণিজ্য ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছর দেশটির মোট রফতানি হয়েছে ৪৯৫ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের। আগের বছরের তুলনায় এটি পাঁচ দশমিক ৯ শতাংশ কম। এর আগে ২০১৫ সালেও রফতানি আগের বছরের তুলনায় আট শতাংশ কমেছিল। তবে ২০১৪ সালে এটি দুই দশমিক চার শতাংশ বৃদ্ধিতে ছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯৫৬ সালের পর টানা দুই বছর রফতানি কমার ঘটনা এটি দ্বিতীয়। ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ সালে রফতানি কমেছিল ৯ দশমিক সাত ও ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে শ্লথগতির কারণে গত দুই বছর দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রফতানি কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে চলতি ২০১৭ সালের শুরুতেই দক্ষিণ কোরিয়ার রফতানি দুই দশমিক ৯ শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা।
Add Comment