Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:48 pm

সেপ্টেম্বরে দেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক মুদ্রায় আরটিজিএসে লেনদেন

রোহান রাজিব: দেশের অভ্যন্তরে আগামী মাস থেকে রিয়েল-টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন নিষ্পত্তি করবে ব্যাংকগুলো। এতদিন প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে দেশের ভেতরে স্থানীয় মুদ্রা টাকায় লেনদেনের অনুমতি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ সেবা চালুর মাধ্যমে দেশীয় মুদ্রার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রায় দ্রুত সময়ে লেনদেন নিষ্পত্তি করতে পারবে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত লেনদেন নিষ্পত্তি কার্যক্রম আরও সহজ হবে। দ্রুত সময়ে লেনদেন নিষ্পত্তির ফলে ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।

সূত্র জানায়, দেশীয় মুদ্রায় রিয়েল-টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) লেনদেনের সর্বনিন্ম পরিমাণ এক লাখ টাকা। সরকারি অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই। তবে আরটিজিএসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় যেকোনো পরিমাণে লেনদেন করতে পারবে। প্রতিটি লেনদেনে গ্রাহক থেকে ব্যাংকগুলো ভ্যাটসহ সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বা সমমানের ডলার ও ইউরো নিতে পারবে। 

কাগজ-কলমভিত্তিক লেনদেন ব্যবস্থার বিকল্প আরটিজিএস শুরু থেকেই ব্যাংকার-গ্রাহকদের আকর্ষণ করেছে। দেশের ৫৯টি ব্যাংকের ১১ হাজারের বেশি শাখা বর্তমানে দেশীয় মুদ্রায় আরটিজিএস সিস্টেমে লেনদেন করে। তাই দেশীয় মুদ্রার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রায়ও এ সেবা চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের ক্ষেত্রে এডি ব্রাঞ্চ ও হেড অফিস ক্লিয়ারিং ইউনিট ইস্যু করতে পারবে। অন্য কোনো শাখা থেকে এ লেনদেন করা যাবে না। সূত্র আরও জানায়, পাঁচটি বৈদেশিক মুদ্রায় নতুন এ কার্যক্রম শুরু হবেÑমার্কিন ডলার, পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরো, জাপানিজ ইয়েন ও কানাডিয়ান ডলারে।

বর্তমানে ব্যাংকগুলোর এ ধরনের লেনদেন করার জন্য একজন কর্মীর মাধ্যমে ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট (এফডিডি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রেখে আসতে হয়। এফডিডির এ ধরনের লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাব রাখতে হয়, যার মাধ্যমে লেনদেন পরিচালিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঋণদাতাদের কাছে পাঠায়।

ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট (এফডিডি) হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চ্যানেল ব্যবহার করে আন্তঃব্যাংক তহবিল স্থানান্তরের সুবিধার্থে ব্যাংকগুলোর ব্যবহƒত একটি চ্যানেল, যা নিষ্পত্তির জন্য এক কার্যদিবস সময়ের প্রয়োজন হয়। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক দিনের মধ্যে এফডিডি নিষ্পত্তি করে, তবে ব্যাংকগুলোর লেনদেন থেকে লাভবান হওয়ার জন্য দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। তবে আরটিজিএসের মাধ্যমে এফডিডি ক্লিয়ারিং হলে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকের হিসাবে লেনদেন নিষ্পত্তি হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের অভ্যন্তরে আরটিজিএসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন নিষ্পত্তি হাওয়ার ফলে সবার সুবিধা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংকগুলোর ঝামেলা কমে যাবে। এছাড়া কাগজ-কলমের যে খরচ, সেটাও কমে আসবে। কারণ এখন অনলাইন সিস্টেমে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর লেনদেন নিষ্পত্তি করবে। এ সেবার ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে গ্রাহকরা দেশীয় মুদ্রায় আরটিজিএস সিস্টেমের মাধ্যমে পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২ কোটি টাকার লেনদেনে নিষ্পত্তি করেছে, যা আগের মাস মে তুলনায় ২৯ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। মে মাসে মোট লেনদেন হয়েছে তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরটিজিএসের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় মুদ্রায় লেনদেন পরিচালনা করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাফর আলম শেয়ার বিজেক বলেন, লেনদেন সহজ করার জন্য এটা ভালো উদ্যোগ। এর ফলে দিনদিন লেনদেন ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। এতে লেনদেনের গতি বাড়বে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান হবে। দেশের ভেতরে বৈদেশিক মুদ্রায় আরটিজিএসে লেনদেন করা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, আমাদের এখানে এখন গার্মেন্ট বাড়ছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে, সে হিসেবে আন্তঃলেনদেনগুলো ডলারে হচ্ছে। যখন এসব লেনদের সেটেলমেন্টটা দ্রুত হবে, তখন ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে এবং গতি বাড়বে।