সেপ্টেম্বরে সিএমএসএমই ঋণ বিতরণে রেকর্ড

শেখ আবু তালেব: অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক সোয়া এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনার ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র, মাঝারি (সিএমএসএমই) প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু শুধু গত সেপ্টেম্বর মাসেই প্রায় দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়, যা একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সেপ্টেম্বর শেষে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই দুই হাজার ১৯২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়; যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৪৬ শতাংশ।

করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি। এতে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিএমএসএমই খাত। তাদের সহযোগিতায় গত এপ্রিল মাসে বিশ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। উৎপাদন, সেবা ও ট্রেডসহ বিভিন্ন খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণের হারও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

এ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলো অর্থ নিয়ে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করবে। এজন্য ৫৬ ব্যাংক ও ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন হারে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

এ ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে সাড়ে চার শতাংশ সরকার দেবে সুদ ভর্তুকি হিসেবে। বাকি সাড়ে চার শতাংশ দেবেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু ব্যাংকগুলো তারপরও ঋণ বিতরণে অনাগ্রহ দেখায়। এতে এক পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট রিস্ক গ্যারান্টি স্কিম ঘোষণা করে। শুরুতে এ ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো আগ্রহ কম দেখায়।

পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তদারকি বাড়ানো হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ বিতরণ হয়। তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ১২ হাজার ৭১৪টি ঋণ আবেদন মঞ্জুর করে ব্যাংকগুলো। এ পর্যন্ত মোট মঞ্জুর হওয়া ঋণ আবেদনের সংখ্যা ২৬ হাজার ৮৬৪টি। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তা হচ্ছেন এক হাজার ১২৪ জন ও পুরষ হচ্ছেন ২১ হাজার ৬৪২ জন।

সিএমএসএমই খাতের ওপর কভিড-১৯-এর প্রভাব নিয়ে সম্প্রতি জরিপ চালিয়েছে বিশ্বব্যাংকের অঙ্গসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও যুক্তরাজ্যের ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস। জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানের (এমএসএমই) অবদান ২৫ শতাংশ। এজন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় এমএসএমই খাতকে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানের অবদান অনেক বেশি। বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ের জন্য পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও কর্মসংস্থানে ব্যাপক অবদান রাখে। করোনাকালে এ খাতের ২১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে ছয় শতাংশ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে কবে নাগাদ এসব প্রতিষ্ঠান চালু হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

আংশিক ও সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭০ শতাংশই পুরো মাত্রায় ঝুঁকিতে আছেন। এসব উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ও পণ্য চাহিদা কমে গেছে। ফলে এ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৩৭ শতাংশের কর্মসংস্থান স্থায়ী ও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এখনও লোকসানে রয়েছে। করোনায় সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফ্যাশন ও কাপড় খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো।

জানা গেছে, বিশ হাজার কোটি টাকার ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংককে দুই হাজার ৯৭৩ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের এক হাজার ৩৭ কোটি, সোনালী ব্যাংকের ৫৩৭ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ২৬৩ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৮৪৬ কোটি ও বেসিক ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৭০ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি ও ইসলামী ধারার জন্য পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ১৭০ ও বিদেশি ব্যাংকের শাখাগুলোকে বিতরণের জন্য ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) ১৩৭ কোটি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) নির্ধারণ করা হয় ৩৬ কোটি টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০