সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই দেশে যুক্ত হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের ফোরজি প্রযুক্তি লং টার্ম ইভ্যুলেশন (এলটিই)। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য নানা কারণে এটা সুসংবাদ। এ সেবা চালুর মধ্য দিয়ে ইন্টারনেটের গতিই শুধু বাড়বে না, কিছুটা হলেও কমবে ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংবাদিকতা, ব্যাংকিং, শেয়ার বিজনেসসহ যেসব ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তিনির্ভরতা বেড়েছে, সেগুলোয় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আরও এক ধাপ। ডিজিটাইজেশনেও পড়বে এর ইতিবাচক প্রভাব। বস্তুত গত পাঁচ বছরে দেশে এ প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ব্যাপকভাবে। গতির ক্ষেত্রে চাহিদা মেটাতে একসময় চালু হয়েছে থ্রিজি প্রযুক্তি। কিন্তু এর সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের বিস্তর অভিযোগ লক্ষ করা গেছে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে। এ অবস্থায় আমরা চাইবো, নতুন এ প্রযুক্তি চালুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দৃষ্টি রাখবে সেবার মানোন্নয়নে।
গতকালের শেয়ার বিজের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যে দুই কোম্পানি সেবাটি চালু করতে যাচ্ছে, তারা আন্তর্জাতিক মানের সেবা কতটা দিতে পারবে, সে ব্যাপারে সন্দিহান গ্রাহকরা। ধারণা করা যায়, ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির সেবা সরবরাহে কোম্পানি দুটির গ্রাহকদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটাই তারা স্মরণ করছেন এক্ষেত্রে। এজন্য বিষয়টি তাদেরও নেওয়া উচিত গুরুত্বসহকারে। মনে রাখা দরকার, কোম্পানির সেবার মান না বাড়ালে উন্নততর প্রযুক্তি চালু করেও গ্রাহক টানা কঠিন। এক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটিয়ে অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দুটি বেশি সংখ্যক গ্রাহক আকর্ষণ করতে পারলে তাদের ব্যবসায়িক পরিস্থিতিরও উত্তরণ ঘটবে সন্দেহ নেই।
দেশে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবার চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। কোনো পণ্য ও সেবার চাহিদা বাড়লে সে অনুযায়ী জোগান যদি না বাড়ে, এর দাম বৃদ্ধি পায় বাজারের নিয়মে। সেবার ক্ষেত্রে জোগানদাতা প্রতিষ্ঠান কম হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে বেড়ে ওঠে মুনাফা প্রবণতা। বাংলাদেশের বাজারে কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমন মনোভাব লক্ষ করা যায় প্রবলভাবে। সেবার পরিধি বিস্তারে এটি নেতিবাচক প্রভাব রাখে কি না, তাও বিবেচনা করা উচিত সংশ্লিষ্টদের। মাঝে বড় লোকসানের শিকার এ দুই প্রতিষ্ঠানের সামনে রয়েছে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে তা পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ। ব্যবসায়িক কৌশল নির্ধারণে এটা বিবেচনায় রাখলে কোম্পানি দুটির সেবার বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকায় ব্যবহারকারীরা খুব একটা উৎসাহ দেখাবে বলে মনে হয় না। এজন্য দাম নির্ধারণে বিদ্যমান বাস্তবতাগুলোও রাখা উচিত বিবেচনায়। প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেলে দাম নির্ধারণে বাজারের উপাদানগুলোর গুরুত্ব বেড়ে ওঠে। এতে সুযোগ বাড়ে ভোক্তাদের জন্যও। ফোরজি প্রযুক্তি সেবা প্রদানে প্রতিযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি হলে বাজার বাস্তবতাই প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারকদের ভাবাবে নতুন করে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবার দাম তুলনামূলক বেশি বলেই মনে হয়। এক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা কি অসম্ভব? মনে রাখা দরকার, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সিংহভাগই তরুণ, যাদের আনুষ্ঠানিক আয় নেই। এ লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা যেতে পারে বিশেষ প্যাকেজ। দেশের যেসব তরুণ শিক্ষাজীবনে আয় শুরু করেন, তারা মূলত অনানুষ্ঠানিক খাতের ওপর নির্ভরশীল। আনুষ্ঠানিক খাতে সম্পৃক্ত করাসহ ইন্টারনেট প্রযুক্তি তাদের আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে কি না, ভেবে দেখা দরকার। এটা করা গেলে তার প্রভাব পড়বে মোট জাতীয় আয়ে (জিডিপি)। মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগোচ্ছি, তাতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির বড় ভূমিকা থাকবে সন্দেহ নেই। এজন্য উচ্চতর গতির ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমরা চাই, অনুমোদন প্রদানে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় রাখুক নিয়ন্ত্রক সংস্থা; সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এটি বিবেচনায় রাখুক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে।