নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট থেকে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা পোর্ট অপারেশন চালু রেখেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অনাগ্রহে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনায় পুরোপুরি সাফল্য দেখাতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবলের অভাব ও প্রশাসনিক জটিলতায় রাতের বেলা এবং শুক্র ও শনিবার বন্দর থেকে ডেলিভারির পরিমাণ অন্যান্য দিনের তুলনায় কম হয়। এতে বন্দরের জাহাজজট ও কনটেইনারজট আগের মতো দেখা যায়। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে হয় চট্টগ্রাম বন্দরকে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিবহন শাখার তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বন্দর জলসীমায় ১০১টি জাহাজ ছিল। এর মধ্যে মূল জেটিতে ছিল ১৩টি, আর জেটির বাইরে ছিল ৮৮টি। এসব জাহাজের মধ্যে পণ্য খালাসের কাজ চলে ৫১টিতে, আর বাকি ৫০টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। একই সময়ে বিভিন্ন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৩৩২টি কনটেইনার ডেলিভারি হয়, যেখানে আগের দিন (বুধবার) চার হাজার ৯৪৪ কনটেইনার ডেলিভারি দেওয়া হয়। আর দিন শেষে মোট কনটেইনার ছিল ৪০ হাজার ১৩৮টি। অপরদিকে গত শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বন্দর জলসীমায় ১১০টি জাহাজ ছিল। এর মধ্যে মূল জেটিতে ছিল ১৩টি। আর জেটির বাইরে ছিল ৯৭টি। এসব জাহাজের মধ্যে পণ্য খালাসের কাজ চলে ৬৮টিতে, আর বাকি ৪২টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। একই সময়ে বিভিন্ন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৪৯০টি কনটেইনার ডেলিভারি হয়, যেক্ষেত্রে আগের দিন (বৃহস্পতিবার) তিন হাজার ৩৩২ কনটেইনার ডেলিভারি দেওয়া হয়। আর দিন শেষে মোট কনটেইনার ছিল ৪১ হাজার ৭২টি।
জানা যায়, অলসভাবে বসে থাকা জাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে কনটেইনার জাহাজ ১৮টি, সাধারণ কার্গোবাহী জাহাজ ১১টি, ফুড গেইনবাহী তিনটি, সিমেন্টের কিংকারবাহী জাহাজ তিনটি, তেলবাহী ট্যাংকার চারটি, চিনিবাহী জাহাজ দুটি এবং সারবাহী জাহাজ একটি। আর জাহাজ আগমনের পাইপলাইনে রয়েছে আরও ৬২টির বেশি। এসব জাহাজ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আসবে, যেগুলোর চট্টগ্রাম বন্দরে আসার সূচি নির্ধারিত আছে। সামনে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি ও বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব সৃষ্টি হলে এসব জাহাজকেও মোকাবিলা করতে হবে জটের ক্ষতি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের গতিশীলতা বাড়াতে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম দিনে ২৪ ঘণ্টা ও সপ্তাহে সাত দিন চালু রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ নিদের্শনা পালনে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস কাজ করলেও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অনাগ্রহ, জনবলের অভাব ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে রাতের বেলা এবং বন্ধের দিন শুত্রুবার ও শনিবার বন্দর থেকে ডেলিভারির পরিমাণ অন্যান্য দিনের তুলনায় কম হয়।
জানা যায়, আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে সহায়ক ভূমিকা পালনকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আগ্রাবাদ এলাকায় অবস্থিত শাখাগুলোর সঙ্গে সেবা চালু রাখার বিষয়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একাধিক বৈঠকে উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একজন সিনিয়র ব্যাংকার বলেন, ২৪ ঘণ্টা পোর্ট অপারেশন চালু রাখার জন্য নৌ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টম হাউজসহ বেশ কয়েক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বেশ কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের সভাপতি ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ২৪ ঘণ্টা অপারেশন চালু রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় গত দুই বছরে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই ব্যাংক ও শিপিং এজেন্টগুলোকে আগে এগিয়ে আসতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের বলে আসছি ২৪ ঘণ্টা বন্দরের সেবা চালু আছে। আপনারা সেবা গ্রহণ করুন। এ জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদানের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং আছে। এখানে বন্দর ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আসতে হবে, বিশেষত শিপিং এজেন্ট ও ব্যাংকগুলোকে। প্রতিষ্ঠানগুলো ডাবল শিফটে জনবল নিয়োগ করলে সহজে ২৪ ঘণ্টা সেবা গ্রহণ করতে পারে। এতে ব্যবহারকারীদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে, পাশাপাশি বন্দর কার্যক্রমে গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম পরিচালনা
সেবা গ্রহণে উপেক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা
