হামিদুর রহমান: দ্রুত টাকা লেনদেন ও উত্তোলন সুবিধা থাকায় দেশে বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার। আর গ্রাহক ধরতে বিভিন্ন ব্যাংকও পরিচালনা করছে মার্কেটিং কার্যক্রম। বর্তমানে দেশে প্রায় দুই ডজন প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। সম্প্রতি এ সেবা চালু করেছে মেঘনা ব্যাংক। তবে বিভিন্ন সার্ভিস না থাকলেও গ্রাহক বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করছে ব্যাংকটির মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান “টেপ ’এন পে”।
জানা যায়, টেপ ’এন পে সেবাটি দ্রুত ছড়িয়ে দিতে লিফলেট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুনের মাধ্যমে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে মেঘনা ব্যাংক। বিভিন্ন এলাকায় রিটেইলারের দোকানে একাধিক সেবা দিতে প্রচার-প্রচারণাও পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এসব সেবার বেশিরভাগই পাচ্ছে না গ্রাহকরা। প্রতিষ্ঠানটি লিফলেটে ১০টি সার্ভিস উল্লেখ থাকলেও মাত্র পাঁচটি সার্ভিস প্রদান করছে টেপ ’এন পে। ফলে সার্ভিস পেতে ভোগান্তিতে পড়ছে গ্রাহকরা।
লিফলেটে বলা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মধ্যে রয়েছে টাকা জমা দেয়া, টাকা পাঠানো, টাকা উত্তোলন, মোবাইল চার্জ, রেমিট্যান্স গ্রহণ, সরকারি ভাতা, কেনাকাটা, অনলাইন পেমেন্ট, টিকিট ক্রয় ও বিল পরিশোধ। যদিও প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে পাঁচটি সেবা প্রদান করছে। এগুলো হলোÑটাকা জমা, টাকা পাঠানো, টাকা উত্তোলন, মোবাইল রিচার্জ ও টিকিট ক্রয়। বাকি পাঁচটি সেবা এখনও চালু হয়নি। কবে নাগাদ চালু হবে তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই।
এ বিষয়ে মেঘনা ব্যাংকের টেপ ’এন পের মার্কেটিং অফিসার ইশান হাইদার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেহেতু সার্ভিসগুলো প্রদান করা হবে, সেহেতু আমরা সার্ভিসগুলো নিয়ে প্রচারণা চালাতেই পারি।’ বিষয়গুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে তিনি কোম্পানির সিইও ড. কামরুল হাসানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিলে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করতে রাজি হননি।
সূত্র জানায়, টেপ ’এন পে সেবাটিকে জনপ্রিয় করতে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর তার ছবি সম্বলিত লিফলেট ও ফেস্টুন রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন রিটেইলারদের সরবরাহ করা হচ্ছে। যদিও রিটেইলাররা বলতে পারছেন না মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কোনো কোনো সেবা এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সাকিব আল হাসানের ছবি দেখে অনেকে টেপ ’এন পে হিসাব খুলতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তবে হিসাব খুলে তারা প্রতারিত হচ্ছেন। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার অধিবাসী আফরোজা জামান বলেন, ‘আমার স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। রেমিট্যান্স গ্রহণের সুবিধার্থে “টেপ ’এন পে”র একটি হিসাব খুলি। সে সময় লিফলেটে থাকা ১০টি সেবাগুলো প্রদান করা হয় বলে জানানো হয়। অথচ পরে জানতে পারি এখন প্রতিষ্ঠানটিতে রেমিট্যান্স উত্তোলন সার্ভিসটি এখনও চালু হয়নি।’
একই ধরনের অভিযোগ করেন রাজধানীর খিলগাঁও অধিবাসী রায়হান আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘রিটেইলারের দোকানে লিফলেটে সার্ভিসগুলো দেখে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে “টেপ ’এন পে”র অ্যাকাউন্ট করা হয়। প্রয়োজনীয় সার্ভিসগুলো দেখে ভালো লাগে। প্রতি মাসে বিভিন্ন বিল-বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল দিয়ে থাকি। টেপ ’এন পেতে বিল পরিশোধের সার্ভিসটি দেখে অনেক আগ্রহ নিয়ে মূলত অ্যাকাউন্টটি করা হয়। যদিও সার্ভিসটি পাচ্ছি না।’
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ‘সেবাগুলো না দিয়ে প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। শুধু গ্রাহক বাড়ানোর কৌশলকে অবলম্বন করলে হবে না। সেবাগুলো তাদের যথাযথ নেই সে বিষয়গুলোও গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে না। গ্রাহকদের যথাযথ সেবা প্রদান না করে এভাবে প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করে গ্রাহকদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করছে প্রতিষ্ঠানটি।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান সেবা প্রদান না করে এ ধরনের প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করলে অবশ্যই এটি গ্রাহকদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা পাশাপাশি, যা আইনবহির্ভূত। মেঘনা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান টেপ ’এন পের সার্ভিসগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে আমাদের কাছেও কিছু তথ্য এসেছে। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
তথ্যমতে, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা করার পর এ পর্যন্ত ২৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লাইলেন্স পেয়েছে। এ যাবৎ ২০টি ব্যাংক এ সেবা চালু করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ২০১১ সালের ৩১ মার্চ সর্ব প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন ৭৬০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২১ মার্চে যাত্রা শুরু করে মেঘনা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান “টেপ ’এন পে”। ব্যাংকটির পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে প্রথমবারের মতো তারা এ সেবায় ব্যবহার করবে চতুর্থ প্রজšে§র প্রযুক্তি। এ কাজে তাদের প্রযুক্তিগত সহযোগী হিসেবে রয়েছে মোবিলিটি আই ট্যাপ পে। যদিও এখনও গতানুগতিক ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাই দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে এদের কোনো রিটেইলার না থাকায় অনেকেই গ্রামে এ হিসাবের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন।