শওকত আলী: ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় তিন দিনব্যাপী এমন একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক। ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে কক্সবাজারে অনুষ্ঠেয় এ সেমিনারে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও যোগ দিচ্ছেন। সেমিনারের বিষয়বস্তু হচ্ছে: ‘ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন প্রসেস অ্যান্ড ইটস ইমপ্যাক্ট’। অর্থাৎ ‘আমেরিকার নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং এর প্রভাব’। বিষয়টি নিয়ে খোদ ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মূলত একটি বিলাসী ভ্রমণের জন্যই এ ধরনের একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে। তিন দিনব্যাপী ব্যাংকটির এ ধরনের সেমিনার ব্যাংকের ব্যাংকিং সেক্টরের কোনো বিষয়ের সঙ্গেই সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটি চলতি মাসের ১২-১৪ তারিখ পর্যন্ত কক্সবাজারে সেমিনার করবে। সেখানে পরিচালনা পর্ষদ সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমন্ত্রিত হয়েছেন। আর এসব আমন্ত্রিত অতিথি যাবেন সপরিবারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর শামিম আহমেদ চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটা ৩৪ বছর বয়সী একটি ব্যাংক এ রকম হাজার হাজার প্রোগ্রাম করে থাকে। এ একটা সেমিনারের আয়োজন করে মনে হচ্ছে আমরা বড় একটা গুনাহের কাজ করে ফেলেছি। তবে আমরা এখনও যাইনি। আর যাবো কি না, সেটাও ঠিক বুঝতে পারছি না।’
এ ধরনের একটি সেমিনার আসলে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য কতটা সংগতিপূর্ণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই সংগতিপূর্ণ একটি ব্যাপার। কারণ এখানে অনেক পজিটিভ বিষয় রয়েছে।’
তবে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য কী ধরনের পজিটিভ মেসেজ এ সেমিনার থেকে আসবেÑএ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে এবি ব্যাংকের এ আয়োজনের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকেও অভিযোগ গেছে বলে জানা গেছে, যা আমলে নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
অভিযোগে বলা হয়েছে, এবি ব্যাংক বিপুল অর্থ ব্যয় করে কক্সবাজারে সেমিনার করছে। তিন দিনব্যাপী এ সেমিনারে আমেরিকার নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে। এখানে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করবে সপরিবারে। মোটা অঙ্কের টাকা খরচ ব্যাংকিং সেক্টরের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ একটি বিষয়ে সেমিনারের নামে আসলে তারা সপরিবারে ভ্রমণ করতে যাবে। এতে আমানতকারীদের টাকার অপচয় হবে। এ কারণে সেমিনারটি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আমেরিকার ইলেকশন এবং এর প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ থাকার কারণে ব্যাংকটি হয়তো এ সেমিনারটি আয়োজন করে থাকতে পারে। তবে বিষয়টি বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত নয়।’
একই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে ব্যাংকের মাথাব্যথা থাকার কোনো কারণ নেই। এটা ব্যাংকের কোনো বিষয় নয়। কারণ ব্যাংকিং সেক্টরের সঙ্গে এর কোনো সংগতি রয়েছে বলে মনে হয় না। তারা আসলে সেমিনারের নামে ব্যাংকের টাকা খরচ করে কক্সবাজার ভ্রমণে যাচ্ছে। এটা খুবই অনৈতিক কাজ।’
এবি ব্যাংকের ২০১৫ সালের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ব্যাংকটির পরিচালন ব্যয় ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এ ব্যয়ের মধ্যে নিয়তি ব্যয়গুলোর পাশাপাশি বেড়ে যাচ্ছে অনিয়মিত ব্যয়। যেগুলোকে অন্যান্য হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। এক্ষেত্রে দেখা গেছে, আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি টাকার বেশি, যা ২০১৪ সালে ছিল ১১৮ কোটি টাকার কিছু বেশি।